
স ম জিয়াউর রহমান : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসনের মদদে চলা শতাধিক ইটভাটার মধ্যে কেবিএম ও সম্রাট নামে দুটি ইটভাটার চিমনিসহ কিলন ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে অভিযান শেষ করলো পরিবেশ অধিদপ্তর।
আজ ২৯ জানুয়ারি বুধবার দিনব্যাপী রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ সদর দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজওয়ান-উল-কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান, রিচার্জ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কাজী ইফতেখার উদ্দিন। অভিযানে র্যাব-৭, রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন এবং বন অধিদপ্তরের কর্মীরা সহায়তা করেন।
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোজাহিদুর রহমান বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ (সংশোধন আইন ২০১৯) এর কতিপয় ধারা লঙ্ঘন করায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে মেসার্স আব্দুল করিম ব্রিকস (কেবিএম) ও একই এলাকার মেসার্স সৌদিয়া অ্যান্ড কোং (সম্রাট) ইটভাটার চিমনিসহ কিলন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি পরিবেশ রক্ষায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর, রাজানগর, লালানগর, হোসনাবাদ, চন্দ্রঘোনা কদমতলি, সরফভাটা, পোমরা ও কোদালা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১২০টিরও বেশি ইটভাটা পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে অবাধে চলছে। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, রাঙ্গুনিয়ায় ইটভাটার সংখ্যা ৬৯টি। আর এসব ইটভাটায় প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত বনের কাঠ ও টায়ার। এতে দুষণ হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার প্রকৃতি ও পরিবেশ। ইট তৈরীর উপকরণ হিসেবে ফসলি জমির টপসয়েল ও পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। যা দেখেও নাকের ডগায় তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসন।
অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও শীর্ষ সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলো, যুগান্তর, কালের কন্ঠ, সমকাল, ভোরের কাগজ, ইনকিলাব, ইত্তেফাক, আমার দেশ, দৈনিক সংবাদ, নয়াদিগন্ত, আজকের পত্রিকা, কালবেলা, প্রতিদিনের বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রামের শীর্ষ সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক পূর্বদেশ, সূপ্রভাত বাংলাদেশ, দৈনিক সাঙ্গু, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ, অনলাইন গণমাধ্যম একুশে পত্রিকা, সিভয়েস, চট্টগ্রাম প্রতিদিন, বাংলাধারার রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি পরিচয়ে কতিপয় দূষ্কৃতিকারীর যৌথ যোগসাজশে চলছে দেশ ও পরিবেশ বিধ্বংসি এসব ইটভাটা। যেগুলোর তিনটি ছাড়া বাকি একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। নেই বনবিভাগের অনুমোদন।
তবে বন বিভাগের অনুমোদন নিয়ে এসব ইটভাটা চলছে বলে জানান সরকার পরিবর্তনের পর ইটভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়া বিএনপি নেতা ইউসুফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ইটভাটাগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে, কিন্তু নবায়ন হয়নি। সেই সূত্রে জেলা প্রশাসনেরও কোন অনুমোদন নেই। এরপরও কীভাবে চলছে ইটভাটা জানতে চাইলে ইউসুফ চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও মানুষের জীবন-যাপনে কি ইটের প্রয়োজন নেই। সেই সূত্রে ইটভাটা চলছে। তবে ইটভাটা নিয়ে কিছু কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়াও অনুমোদন না নেওয়া এবং ছাড়পত্র নবায়ন না করে কিভাবেই এসব ইটভাটা৷ চলছে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে আরও এ প্রতিবেদককে হুমকি দেন। তিনি বলেন, এতোদিন আওয়ামী লীগ খেয়েছে কোন সমস্যা হয়নি, এখন আমরা খাবো। এখন আওয়ামী লীগ নেই, এখন বিএনপি ক্ষমতায়।
এ বিষয়ে জানতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল নিসিভ করেননি।
এদিকে একই এলাকার এসবিএম-১ ও এসবিএম-২ এর মালিক খোরশেদ আলম ও পারভেজ আলম বিএনপি সমর্থিত মালিক হওয়ায় নানা অনিয়ম সহ অনুমোদন না থাকা ছাড়াও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তারা অবাধে পাহাড় কাটছে ও বনের বৃক্ষ পুরিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে। এ দুটি ইটভাটায় আজ কোন ধরনের অভিযান পরিচালনা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্হানীয় লোকজন এসবিএম -১ ও এসবিএম -২ তে জরুরি ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনার দাবি জানান এবং পরিবেশ রক্ষার অনুরোধ করেন।
এদিকে চট্টগ্রামের পরিবেশ সংগঠন এ্যাড ভিশন বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো মাসুদ রানা রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা নিয়ে বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন শুনে ভালো লাগলো, তবে মাত্র দুটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে অভিযান কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তিনি এসবিএম -১ ও এসবিএম-২ এর মতো অবৈধ ইটভাটাগুলোর অভিযানের দাবি জানান।