
নিজস্ব প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে প্রজনন মৌসুমের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে গতকাল মধ্যরাত থেকেই সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলেরা। সরগরম হয়ে উঠেছে জেলে পল্লী ও মৎস্য বন্দরগুলো। দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরসহ কুয়াকাটা সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও জেলে পল্লীগুলোতে কর্ম তৎপড়তা ফিরে এসেছে।
বরফকলগুলোতে বরফ উৎপাদন শুরু করেছে। সমুদ্রে ৫৮ দিনের অবরোধের কারণে কষ্টে জীবনযাপন করা জেলেদের মুখে হাসি ফুটে ওঠেছে। সমুদ্রে ফিরে গিয়ে ইলিশ শিকার করে নিয়ে আসবে তীরে এমন আশা নিয়ে সমুদ্রে যাবে জেলেরা। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার মৎস্য আড়ৎগুলোতে নতুন করে ধোয়া মোচার কাজ চলছে। কুয়াকাটা সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জেলে পল্লীগুলোতে কর্মব্যস্ত হয়ে পরেছে মৎস্যজীবিরা। মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর-কুয়াকাটাসহ সমুদ্র উপকূলের জেলে পল্লীগুলো আবার দীর্ঘ সময় পর সরগরম হয়ে ওঠেছে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও আলিপুর মহিপুর মৎস্য আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারে যাওয়া ট্রলারগুলোতে জাল, গেড়াফি, তৈল, চাল, ডালসহ মৎস্য উপকরণ ট্রলারে বোঝাই করে রওনা করছে ট্রলারগুলো।
উল্লেখ্য, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য ২০১৫ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মোট ৬৫ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু জেলেরা দাবি করে আসছিল আমাদের দেশে যখন অবরোধ চলে তখন ভারতীয় জেলেরা আমাদের সীমানায় এসে মাছ ধরে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে মিল রেখে এই অবরোধ করার জন্য। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় এ অবরোধের বিরোধিতা করে আসছিলো জেলেরা। তাই জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৪ এপ্রিল মধ্য রাত থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার।
গভীর সমুদ্রের ইলিশ শিকারী কুয়াকাটার জেলে মোশাররফ মাঝি বলেন, অবরোধের সময়সীমা যতই ঘনিয়ে এসেছে ততই অপেক্ষার বাঁধও ভেঙে যাচ্ছিলো কখন সমুদ্রে যাবো। কখন ইলিশ ধরে নিয়ে এসে বিক্রি করে ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফুটাবো। ১৫ দিন আগেই তারা জাল ও ট্রলার মেরামত শেষে মৎস্য উপকরণ বোঝাই করে সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ অবরোধ শেষ, মধ্যরাতেই ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন তারা। আরো বলেন, অবরোধকালীণ সময়ে সরকার বিশেষ প্রণোদনার চাল দিলেও তাতে তাদের সংসার চলছে না। তার দাবি অবরোধকালীন সময়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেদের জন্য বিকল্প কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করার।
কুয়াকাটা আড়ৎদার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম খান বলেন, প্রজনন মৌসুমের ৫৮ দিন অবরোধ শেষে জেলেরা ১১ জুন মধ্যেরাতে সমুদ্রে ইলিশ শিকারে রওয়ানা হয়ে যান। অবরোধের ৫৮ দিন জেলেরা অনেক কষ্টে জীবণযাপন করেছেন। জেলে নেতা নিজাম শেখ বলেন, ৫৮ দিনে ৮০ কেজি চাল দিয়ে জেলেদের সংসার জীবন চলে না। প্রজনন মৌসুম ও ঝাটকা মৌসুমের জন্য রেশণ কার্ড চালুর দাবি জানান। তিনি বলেন, সমুদ্রে ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকারের মাধ্যমে দেশের মৎস্য চাহিদা পূরণ করে আসছে জেলেরা। অথচ জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে ঝড় কিংবা জ্বলোচ্ছাসে সমুদ্রে ডুবে মারা যাবার পর তাদের পরিবারকে খাবারের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। তাই তিনি নিবন্ধন কৃত জেলেদের জন্য ঝুঁকি ভাতা চালুর জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
এবিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সরকারের নির্দেশক্রমে ৫৮ দিনের অবরোধ শেষ হল ১১ জুন। এই অবরোধের ফলে সমুদ্রে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ সুষ্ঠুভাবে প্রজনন করতে পেরেছে বলে আমরা আশা করি। অবরোধ চলাকালীন সময়ে জেলেদের প্রণোদনার চাল সুষ্ঠুভাবে পৌঁছেছে। তিনি আরো বলেন, মূলত দুটি কারণে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রজনন সুবিধায় যাতে মাছ নির্বিঘেœ ডিম ছাড়তে পারে। আর অপরটি হলো- ছোট মাছকে বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। যার ফলে বর্তমানে বড় আকারের ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পরছে। এবার আমাদের অবরোধ ফলপ্রসূ হয়েছে। এবছর সমুদ্রে প্রচুর মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়বে বলে আশা করি।বা:প্র।