হবিগঞ্জে ১ সপ্তাহে ১৫ নবজাতকের মৃত্যু

খবর ডেস্ক :
হবিগঞ্জে গত ১ সপ্তাহে ১৫ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার সিলেটে সূর্যের দেখা মিললেও হিমশীতল বাতাস ছিল। গত কদিন ধরে সিলেট অঞ্চলে শেষ পৌষের শীত বইছে বেশ ভালোভাবেই। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সিলেট অঞ্চলের মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে। বিশেষ করে হাওরপাড়ের মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। সিলেট জেলা প্রশাসন, র‍্যাব-৯ ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্থানে শীতের কম্বল বিতরণ করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেকেই সরকার, জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানদের এ বিষয়ে হাত বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু ও বৃদ্ধরা কষ্ট পাচ্ছেন বেশি। হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হবিগঞ্জে গত এক সপ্তাহে ১৫ নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে। হবিগঞ্জ ২৫০ বেডের হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাস জানান, তীব্র শীতে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এ কারণে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। তিনি অভিভাবকদের সচেতন থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে বেলা ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে চারপাশ। সেই সঙ্গে প্রবাহিত হয় মৃদু হিমেল বাতাস। গভীর রাতে ঠাণ্ডার প্রকোপ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে। অফিসে কাজেকর্মে চলছে স্থবিরতা। হাটে-বাজারে মানুষ কম। শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট বেশি। শীতবস্ত্রের অভাব। ফুটপাতে প্রচুর শীতবস্ত্র পাওয়া গেলেও দাম বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সিলেট নগরীর রিকশাচালক মাসুক মিয়া বেশ কয়েক দিন ধরে গরম কাপড় কিনতে পারছিলেন না। রবিবার অন্য এক জনের সহায়তায় একটি জ্যাকেট কিনেছেন।

এদিকে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের কৃষকেরা জানান, এখন বোরো ধানের চারা রোপণের সময়। কিন্তু কুয়াশা ও বাতাসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বোরো জমিতে চারা রোপণ করাও যাচ্ছে না। শ্রমিকদের চারা রোপণ কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। গত এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে বাড়ছে শীত। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

এদিকে গত ১ সপ্তাহে ১৫ নবজাতকসহ ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাস। শুক্রবার এক দিনে হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটে ৫ নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বুধবার মারা গেছে ১ শিশু। বর্তমানে শিশু রোগীর চাপে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ঐ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এই হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের ১১ সিটের বিপরীতে ভর্তি আছে ৭৫ জন। শনিবার সকালে হাসপাতালের স্ক্যানুতে গিয়ে দেখা গেছে, নবজাতক কোলে অভিভাবকদের দীর্ঘ লাইন। সেখানে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাস রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। নবজাতকদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদের সিলেটে পাঠানো হচ্ছে। এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শনিবার ভর্তি ছিল ৯৬ শিশু। অথচ সেখানে সিট আছে মাত্র ৫৯টি। ভর্তি রোগীর অধিকাংশই নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত। নার্স জ্যোৎস্না আক্তার জানান, হাসপাতালে ভর্তি শিশু রোগী বেশির ভাগ নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের নার্সরা যথার্থ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হবিগঞ্জ সদরের আনন্দপুর গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, ২ দিন আগে তার স্ত্রী সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন। এখন বাচ্চা ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা চলছে। রোগীর অভিভাবকেরা জানান, নার্স ও ডাক্তাররা আন্তরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন