
অনলাইন ডেস্ক : গত ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে শুরু হওয়া রাজনৈতিক রদবদল এবং ব্যাপক জনচাপের মধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একের পর এক প্রভাবশালী সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে। এ তালিকায় শুধু মন্ত্রী বা আমলা নন, যুক্ত হয়েছেন সেনা, বিমান ও গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপর্যায়ের ১০ জন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে তাদের অনেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন, জব্দ হয়েছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দেওয়া হয়েছে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা।
দুদকের নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়। অভিযোগগুলো মূলত ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থপাচার ঘিরে গড়ে উঠেছে। তদন্তের আওতায় যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান, বিমানবাহিনী প্রধান, এনএসআই ডিজি, রাজউক চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামরিক সচিবও আছেন।
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ও পরিবারের নামে শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বাড়ি কেনা ও ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ও। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপপরিচালক মো. জাকারিয়া। আজিজের ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএস, নিকুঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ও জমি রয়েছে, এমনকি ‘আজিজ রেসিডেন্স’ নামে একটি বিলাসবহুল বাংলোর অস্তিত্বও নিশ্চিত করেছে দুদক। ২০২৪ সালের ২০ মে যুক্তরাষ্ট্র তার ও পরিবারের ভিসা বাতিল করে।
সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান শেখ আব্দুল হান্নান
২০২১-২০২৪ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) শেখ আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ গড়ার পাশাপাশি বিদেশে অর্থ পাচারের। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি একাধিক জায়গায় ফ্ল্যাট, জমি ও ব্যাংক হিসাব গোপনে হস্তান্তরের চেষ্টা করেছেন। তার বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট ও নারায়ণগঞ্জে জমি জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকে থাকা অর্থ অবরুদ্ধ করা হয় এবং তার পরিবারসহ বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টি এম জোবায়ের
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টি এম জোবায়েরের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের ঘুষ নেওয়া, ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পদ অর্জন এবং লন্ডনে প্রায় ৩০ লাখ পাউন্ড পাচারের অভিযোগ তদন্তাধীন। তার এবং স্ত্রীর নামে থাকা ট্রাস্ট ব্যাংকের পাঁচটি হিসাব আদালতের আদেশে জব্দ করা হয়েছে। এর আগে তার বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান
পূর্বাচল প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তদন্তাধীন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান। তাকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে নিয়োগ দেওয়া হলেও সরকারের রদবদলের পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে আবার নিয়োগ দেওয়া হলেও ২০২৫ সালের মার্চে পুনরায় তার চাকরি বাতিল করা হয়। তার ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব সালাউদ্দিন মিয়াজী
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব এবং পরবর্তীতে এমপি হওয়া মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজীর বিরুদ্ধে জমি দখল, পার্ক নির্মাণে অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এসেছে। যশোর, মহেশপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের মার্চে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারিতে যৌথবাহিনী তাকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান হামিদুল
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করছে দুদক। এজন্য দুদকের উপপরিচালক আজিজুল হককে দলনেতা করে দুই সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। দলের অপর সদস্য হলেন মো. মিজানুর রহমান।
দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে গত ২১ এপ্রিল আদালত হামিদুল হক ও তার স্ত্রী নূছরাত জাহান মুক্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দুদকের আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তরা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন বলে তথ্য রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান নিশ্চিত করতে তাদের বিদেশে যাওয়া ঠেকানো জরুরি।১৯৭০ সালে কক্সবাজারে জন্মগ্রহণ করেন হামিদুল হক। সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৮৮ সালে। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৯০ সালের ২২ জুন সেনাবাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি কোরে তিনি কমিশন পান। সবশেষ সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং সিলেটের এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।এর আগে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০৩ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ ছাড়া ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কলেজ সেক্রেটারি এবং কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এসএসএফের সাবেক ডিজি মুজিবুর রহমান
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তাপ্রধান এবং ক্ষমতার পালাবদলের পর চাকরি খোয়ানো শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের অন্যতম মো. মজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের ‘অবৈধ’ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমে দুটি ফ্ল্যাট, ১০টি প্লটসহ দুটি বাড়ির খোঁজ পেয়েছে দুদক।অনুসন্ধানে নেমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের সম্পদ জব্দ করতে আদালতের অনুমতিও পেয়েছে দুদক। পাশাপাশি তাদের ১৬টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হককে দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান এবং উপসহকারী পরিচালক জুলফিকার। বরখাস্ত হওয়ার আগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমান আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি ছিলেন। তিনি এক সময় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক ছিলেন, যেটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক মাস পর মজিবুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর মজিবুর রহমানকে বরখাস্ত করার আদেশ জারি করে। আর্টডকে দায়িত্ব পাওয়ার আগে মজিবুর রহমান ছিলেন সেনা সদরের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি)। হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে আলোচনায় আসা এ সেনা কর্মকর্তা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালকও ছিলেন।
পরে তাকে এসএসএফের মহাপরিচালক করে তৎকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে সময় তিনি হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী
সাবেক এমপি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাসুদের সঙ্গে ফেনীর সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ সাবেক অর্থমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অবৈধ ব্যবসার অভিযোগে ১৬টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। মাসুদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মোহাং নূরুল হুদাকে দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছেন উপপরিচালক ওমর ফারুক ও সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম। দুদকে আসা অভিযোগের বিষয়ে মাসুদ উদ্দিনের বক্তব্য জানা যায়নি।
এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল
গত জানুয়ারিতে প্রায় ৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জন এবং ৩৪২ কোটি টাকার ‘অস্বাভাবিক লেনদেনের’ অভিযোগে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুদক।
দুদক বলছে, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান তার ‘জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। অনুমোদিত সীমা লঙ্ঘন করে নিজ হিসাবে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করে স্ত্রী নুসরাত জাহানের ‘সহযোগিতা ও যোগসাজশে’ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন। জিয়াউল আহসানের নামে আটটি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানকালে জিয়াউল আহসানের সম্পদের যে তথ্য দুদক তুলে ধরেছে, তাতে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালে মধ্যে তিনি এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকে তার বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা এবং পাচারের তথ্য পাওয়ার কথাও বলেছে দুদক। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া জিয়াউল সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও প্যারাট্রুপার ছিলেন। ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে তিনি র্যাবে-২ এর উপঅধিনায়ক হন।
ওই বছরই তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন এবং র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পান। র্যাবে দায়িত্ব পালনের সময় থেকেই জিয়াউল আহসান হয়ে উঠেছিলেন সংবাদমাধ্যমে পরিচিত নাম। কর্নেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক করে তাকে র্যাবেই রেখে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে জিয়াউল আহসানকে পাঠানো হয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিচালকের দায়িত্বে।
পরের বছরই এনটিএমসির পরিচালক করা হয় জিয়াউল আহসানকে। ২০২২ সালে সংস্থাটিতে মহাপরিচালক পদ সৃষ্টির পর তাকেই সংস্থাটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছিল। ক্ষমতার পালাবদলের পর সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে রদবদলের ধারাবাহিকতায় গত ৬ আগস্ট তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় জিয়াউল আহসানকে। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে গুম, খুন এবং ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া গোপন বন্দিশালায় নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের ১৬ অগাস্ট গ্রেপ্তারের পর জিয়াউল আহসানকে বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাতেও তার নাম এসেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন ।
বিজিবির সাবেক ডিজি সাফিনুল
বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক। এ অভিযোগে গত ৯ মে তাকে ও তার স্ত্রী সোমা ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফেরার সময় তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
তাদের আইনজীবী মিজানুর রহমান সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ওনারা যা আয় করেছেন, সবই জ্ঞাত উৎস থেকে। কোনো অবৈধ উপার্জন নেই। সাফিনুল ইসলাম একজন সৎ, দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে দেশকে সেবা দিয়েছেন। তাদের সম্পদের হিসাব আয়কর নথিতে উল্লেখ রয়েছে এবং দুদককে তা জানানো হয়েছে।
‘একটি জাতীয় নির্বাচনে তিনি দায়িত্বে ছিলেন’- এরকম এক প্রশ্নে আইনজীবী বলেন, “উনি শুধু সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার কখনো করেননি।” সাফিনুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বিজিবির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ এপ্রিল আদালত সাফিনুল ও তার স্ত্রীর ৫৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয়। এসব হিসাবে সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত ও ক্রেডিট কার্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তার আগে গত ১৩ মার্চ দুদকের আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্যও জানা যায়নি।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিটি অনুসন্ধানে অন্তত তিনজন কর্মকর্তা দায়িত্বে রয়েছেন। রেকর্ডপত্র সংগ্রহ, জিজ্ঞাসাবাদসহ নিয়মমাফিক অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষ হলে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে এবং সেই ভিত্তিতে মামলা দায়ের বা সম্পদ বাজেয়াপ্তের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এত বড় পরিসরে দুর্নীতির অভিযোগ একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও নীতিনৈতিকতা প্রশ্নে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে, অন্যদিকে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাবে জনআস্থা ফিরিয়ে আনছে। এখন নাগরিকদের প্রত্যাশা, তদন্ত যেন পক্ষপাতহীন হয় এবং কারো পদ-পদবি বা অতীত ইতিহাস যেন বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রভাব না ফেলে। এজন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করাই হবে রাষ্ট্রের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যসূত্র :ইনকিলাব সূত্রে।