সাতকানিয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ জনগণ : ভয়ে মুখ খুলতে পারছেনা কেউ, সংবাদ প্রকাশ হলেও ব্যবস্থা নেই

নিজস্ব প্রতিনিধি:দীর্ঘদিন থেকে সাতকানিয়ায় নানা অপকর্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ কিশোররাই জড়িত। বয়স ১৫ থেকে উর্ধে বছর। এরা অপরাধের মধ্যে মোবাইল ছিনতাই, বাজী ফুটিয়ে আতঙ্ক তৈরি, জায়গা দখল, মাদকব্যবসা ও সেবন, চুরি, ইভটিজিং, ভাড়াটিয়া হিসেবে হঠাৎ যে কারো উপর হামলাসহ নানা ঘটনা করে আসছিল। এতে বেশির ভাগ ঘটনায় অল্প বয়স বা কিশোর সদস্য জড়িত থাকায় এরা কিশোরগ্যাং নামে পরিচিত ও খ্যাতি অর্জন করে। এলাকার সচেতন লোকেরা এদেরকে কিশোরগ্যাং উপাধি দেন। বর্তমানে সারা দেশে এক নামেই কিশোরগ্যাং বলতে অন্যতম আতংক হিসেবে পরিচিত।
এদিকে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় বেড়েছে কিশোর গ্যাং এর উৎপাত। গত কিছুদিন ধরে কিশোর গ্যাংয়ের হাতেই ঘটেছে বেশ কয়েকটি ঘটনা। কথায় কথায় মারধর মোবাইল কেড়ে নেওয়া, হুমকি-দমকি, ভাড়াটিয়ায় জায়গা দখল-বেদখল, মারধর, হামলা, বাড়ি-দোকান ঘরে কন্ট্রাকে আগুন দেয়া, এটি নৈমিত্তিক। গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, উপজেলার সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বারদোনায় একটি গ্যাং রয়েছে। এরা দীর্ঘদিন থেকে বারদোনা এলাকায় উল্লেখিত অপকর্ম সংঘটিত করে ত্রাসে পরিনত করে। এদের বিরুদ্ধে কেউ বা কোন জনপ্রতিনিধি প্রতিবাদ করছে চোখে পড়ে নাই, হুদ প্রশাসনও নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। অত্র এলাকার অনেক ভূক্তভোগিরা থানা ও আদালতে আশ্রয় নিয়েও কোন পলাফল ভাল হয় নাই, এমনকি উল্টো মারধর, মিথ্যা মামলা-হামলা ও হয়রাণির শিকার হয়ে নিজ স্ব সম্পদ বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর জীবন যাপন করতেছে।
সূত্রে ও ভূক্তভোগি গিয়াস উদ্দিন জানান, সে মার্কেট তৈরির জন্য তাহার নিজস্ব কিছু জায়গা বিক্রি করে। এতে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতে তাকে। উক্ত খবর এলাকার ঐসন্ত্রাসীদলের সদস্যর মূল হোতা ড্রাইবার ছফুর মেম্বারগং চাঁদা আদায় করতে চেষ্টা করে। গিয়াস উদ্দিন বারদোনার শাহ মজিদিয়া মার্কেট মালিক সদস্য ও একজন সাংবাদিক। তাহার নিজ মার্কেটে গিয়াস ডিপার্ট মেন্টাল নামে একটি বড় দোকান ছিল। ঐ চাঁদাবাজদের নজর ছিল গিয়াস উদ্দিনের সম্পদ ও টাকার দিকে। তাদেরকে গিয়াস টাকা না দিলে বিভিন্ন কৌশল বের করে, এক পর্যায়ে কৌশল বের করে গিয়াস উদ্দিনের মামা আইয়ুবের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী আরেফা বেগম জায়গা পাবে। গিয়াস তাদের কার্যকলাপ ঠের পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে একটি মামলা করেন, যার নং- ৪১/২০২২ইং। তাং- ২/০৩/২০২২ইং। উক্ত মামলা করায় চাঁদাবাজ দলের হোতা মেম্বারসহ তারগ্যাং দলের সদস্যদের মাথা খারাপ হয়ে উঠে। তারা দিন দুপরে জোরপূর্বক গিয়াস উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট বন্ধ করিয়ে দেয়। গিয়াস থানার আশ্রয় নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ উভয়কে নিয়ে বৈঠকে বসেন। এত গিয়াস উদ্দিনের কাগজপত্র সঠিক থাকায় ছফুর মেম্বার চাঁদাবাজকে বকা ও আটক করতে চাইলে আরেফাগং এর উক্ত মেম্বার তৎসময় উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের আশ্রয় নেন। গিয়াস উদ্দিন অপারিক হয়ে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আবার উক্ত চেয়ারম্যানের নিকট উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে একে একে ৩বার বৈঠকে বসার পর চেয়ারম্যানও গিয়াসকে সঠিক রায় দেন। কিন্তু আদালতে মামলা ও নিষেধাজ্ঞা চলমান আছে, মামলা থাকলেও মানছেনা কেউ। বিচার করতে হচ্ছে। এরপরও কোন দিকে গিয়াসকে আটকাতে বা অবৈধ প্রমাণ করতে না পেরে কৌশলে মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে গিয়াসের মার্কেটসহ আরো ৪ জনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা পুড়ে যায়। এতে গিয়াস উদ্দিনের অন্তত ৫০/৬০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়। এরপর গিয়াস পুনরায় দোকান সংস্কার করতে চাইলে উক্ত চাঁদাবাজ ও কিশোরগ্যাংরা দোকান তৈরিতে বাধা, হামলা, বাড়ি ঘরে হামলা, গিয়াস মামলা করলে মিথ্যা বলে রটানো, বিভিন্ন গুজব, মামলার সাক্ষীদের হুমকি-দমকি মারধর চেষ্টা। এরপর বিভিন্ন হলুদ সাংবাদিক দিয়ে অপপ্রচার একে একে ২টি নারী ধর্ষণ চেষ্টার মামলা। এরপরও গত ৭আগষ্ট ২০২৩ইং বাড়ি-ঘর লুটপাট, মারধর অবশেষে হত্যার উদ্দেশ্য গিয়াসকে অপহরণ। সব ঘটনায় উক্ত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি মামলা করে গিয়াস। তার বিরুদ্ধেও ১০টিরমত মামলা করে। জায়গায় গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও উৎকাৎ করতে হামলা, জুলুম-নির্যাতন এমনকি মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় বাড়ি ঘর এমনকি বর্তমানে গিয়াস এলাকা ছাড়া। প্রশাসনসহ কেউ কাজে আসে নাই এবং রক্ষা করে নাই।
চাঁদা না পাওয়ায় আরো ঘটনা অনেক। মেম্বার হওয়ায় সে আটকালে তার সুর বিচারের। কোন অদক্ষ আমামে বিচার করতে পারে? ইতিমধ্যে তার দলের সদস্যদের বর্তমানে এলাকাবাসি হাতে নাতে ধরছে এবং উত্তম মাধ্যম দিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গনমাধ্যমে প্রকাশ ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ২ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করছে। তারা হলেন-সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ রুপকানিয়ার বাসিন্দা মো:ছরোয়ার কামাল ও মিজানুর রহমান। তারা সংবাদ কর্মী হিসেবে পরিচিত ও জড়িত। সূত্রে তারা এলাকার বিভিন্ন অনিয়ম-অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাদেরকে এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে মারধর ও হামলা করে। হামলার সময় সন্ত্রাসী স্পষ্ট উল্লেখ করছে কতবড় সাংবাদিক হয়েছে দেখবে। ভিডিওটি আমাদের নিকট সংগ্রহ আছে এবং উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও ব্যবস্থা দুরের কথা, কেউ আজ পর্যন্ত খবর রাখে নাই উক্ত সন্ত্রাসী কে বা কারা এবং তাদের নেশা-পেশা বা কর্ম কি। এরপর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
গারাংগিয়ায়ও কিশোরগ্যাং আতংক।
এদিকে, কিছুদিন পূর্বে থেকে সাপ্তাহিক আবেদন, দৈনিক মেহেদী,দৈনিক সুপ্রভাত, দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ,পূর্বাবাস, দৈনিক একুশের বাণী, আমাদের খবর ডট কমসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে কিশোরগ্যাদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থার নজির নেই।

সূত্রে, কেরানীহাট মা-শিশু হাসপাতাল, শপিং সেন্টার, এলাইট হাসপাতাল, নিউ মার্কেট বি-ব্লক, সিটি সেন্টার এবং রাস্তার মাথা এলাকায় ৬-৭জন বিশিষ্ট এই কয়েকটি কিশোর গ্যাং এর উৎপাত রয়েছে। এসব গ্যাংয়ের অধিকাংশ সদস্যই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
স্থানীয় অনেক নেতা এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, ডিস ও নেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, অস্ত্রবাজি, উত্ত্যক্তসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে আধিপত্য বজায় রাখতে কিশোর গ্যাং গড়ে তোলেন। এদের লাগাম কোনোভাবেই টানতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ২ জুন দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতিবাদ করায় মো. নবী হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর মাথা ফাটিয়ে দেন ছিনতাইকারীরা।আহত ব্যক্তির থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পহেলা জুন রাত সাড়ে ৭টার দিকে কেরানিহাট মেহফিল নামক একটি হোটেলের সামনে থেকে আয়াত উল্যাহ ও কায়েস নামের দুই নির্মাণ শ্রমিককে নুরুল ইসলাম মিয়া ও মো. শাকিলের নেতৃত্বে ৪/৫ যুবক ধরে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় নির্জন স্থানে তোলেন। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ও দুটি হাত ঘড়ি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ছিনতাইয়ের বিষয়টি আয়াত তাদের ঘনিষ্ঠজনদের জানালে পরদিন সকালে কেরানিহাটের পশ্চিমে মাইজপাড়া এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী নবী হোসেনসহ কয়েকজন মিলে ঘটনায় জড়িতদের বাড়িতে গিয়ে ছিনতাই করা মোবাইল ও হাত ঘড়ি ফেরত দিতে বলেন।
এসময় নবী হোসেন যুবকদের ছিনতাইসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাইজপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী নবী হোসেনের উপর হামলা চালান। এতে মাথা ফেটে নবী গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। এদিকে গত ৪ জুন সাতকানিয়া কেরানিহাট ইউনিয়নের কেরানিহাট মা ও শিশু হসপিটালের সামনে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে মো. শহিদুল আলম ওরফে শফি আলম নামে এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।ঘটনার পর শহিদুলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শহিদুল (৩৫) উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী পাড়ার আসহাব ছেলে।
শহিদুল জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি কেরানিহাট মা ও শিশু হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় স্থানীয় কিশোর গ্যাং লিডার ইকবালের নেতৃত্বে দু- -তিনজন ছেলে এসে তাঁর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে গেলে তিনি ইকবালকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। এ সময় সে তার কোমরে থাকা ছুরি দিয়ে তাঁর পেটের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে পাশের মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাঁকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। অভিযোগ আছে কক্সবাজার এবং চকরিয়া থেকে ব্যবসায়ীরা যখন সাতকানিয়া রাস্তারমাথা এলাকায় বাস থেকে নামে তখন সেখানে ওৎ পেতে থাকে কিছু কিশোর গ্যাং এর সদস্য।
মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের মোবাইল এবং নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায় তারা। চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এবং মূলহোতাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা সাতকানিয়ায় কিশোরে গ্যাং এর মূলহোতাদের শনাক্তের জন্য কাজ করছি। আশা করি খুব তারাতারি এই সমস্যাটি সমাধান হবে। আমাদের পুলিশ বিশেষ দল এটি নিয়ে কাজ করছে।

মন্তব্য করুন