বিচারকের ভুল করার সুযোগ নেই

খবর ডেস্ক :
পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো বিকল্প নেই। সঠিক বিচার পাওয়া সকল মানুষের অধিকার। এবং ন্যায়বিচার কায়েম করা আল্লাহর পক্ষ থেকে বাধ্য বান্দাকে করে দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে, তোমরা যা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন। (সূরা মায়িদা : ৮)।
মহান রাব্বুল আলামীনের এক নাম আদল। অর্থ ন্যায়পরায়ণ। আদল থেকে আদালত। যার অর্থ ন্যায়ের স্থান। মানুষ যখন সবদিক থেকে বিমুখ হয়, কোথাও যখন সে আশ্রয় না পায়, তখন সে দারস্থ হয় ন্যায়ের স্থানে। প্রতিকার চায় বিচারকের কাছে। একজন মানুষের জীবনে ন্যায়বিচার অধিক গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনের প্রথম সূরা ফাতিহায় আল্লাহ তায়ালা নিজের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে, ইরশাদ হয়েছে : তিনি বিচার দিবসের মালিক। (সূরা ফাতিহা : ৩)। সেদিন তিনি তামাম সৃষ্টিজীবের বিচার করবেন।

ইসলামী মতে, বিচার পরিচালিত হবে কোনো আদালতের মাধ্যমে বা আদালত থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা সংঘ দ্বারা। কোনো গোষ্ঠী অথবা ব্যক্তি কারও বিচার করার ক্ষমতা রাখে না। কারণ, এতে করে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, স্বেচ্ছাচারিতা ও জুলুমে সমাজ সয়লাব হয়ে যাবে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন, গুম, সন্ত্রাসের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে থাকবে।

সভ্য পৃথিবী টিকিয়ে রাখতে তাই বিচারকের দায়িত্ব অনেক বেশি। কোরআন ও হাদিসে তাদের ব্যাপারে কড়াকড়ি নির্দেশনা দিয়েছে। বিচারক পদটি একটি স্পর্শকাতর পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। হাদিস শরীফে উল্লেখ হয়েছে : আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তিকে লোকদের মধ্যে বিচারক বানানো হয়েছে, তাকে যেন ছুরি ব্যতীত জবেহ করা হয়েছে। (আবু দাউদ : ৩৫৩৪)।

ইবনু বুরাইদাহ (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আরেক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন : বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতি এবং অপর দু’প্রকার বিচারক জাহান্নামি। জান্নাতি বিচারক হলো, যে সত্যকে বুঝে তদনুযায়ী ফায়সালা দেয়। আর যে বিচারক সত্যকে জানার পর স্বীয় বিচারে জুলুম করে সে জাহান্নামি এবং যে বিচারক অজ্ঞতাবশত ভুল বিচার করবে সেও জাহান্নামি। (আবু দাউদ : ৩৫৩৫)।

উপরোক্ত হাদিসের ভাষ্যনুযায়ী বিচারপতির পদে থেকে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই। ভুল করেও যদি কোনো বিচারক নিরপরাধকে শাস্তি দেয় তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। আর সত্য জানার পরও যদি কেউ জুলুম করে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করা আছে। তথাপি কেউ যদি ওই পদে আসীন থেকে সঠিক বিচার করে রাসূলে আকরাম (সা.) তার জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে, কেউ যদি যাচাই-বাছাই, চিন্তাভাবনা এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরও বিচারে ভুল করে ফেলে তাহলে তাকে তিরস্কার করা হবে না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : আমর ইবন আস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যখন কোনো বিচারক চিন্তাভাবনার পর সঠিক বিচার করে, তখন সে দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হয়। আর চিন্তা-ভাবনার পরও যদি ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, তখন সে এক গুণ ছওয়াব পায়। (আবু দাউদ : ৩৫৩৬)। তিরমিযী ও ইবনে মাজার এক হাদিসে বলা হয়েছে : বিচারক অন্যায় না করা পর্যন্ত আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। যখন সে জুলুম করে তখন আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন না এবং শয়তান তার সঙ্গী হয়ে যায়।
ইসলামী পৃথিবীতে এসেছে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। সেই মতে বিচারব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন, তোমরা আমানত পেঁৗঁছে দাও তার প্রাপকদের কাছে। আর তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন, তা কত উৎকৃষ্ট। (সূরা নিসা : ৫৮)।

আরেক আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে যায়, সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠ। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হবে না। যদি তোমরা প্যাঁচালো কথা বলো অথবা পাশ কেটে যাও তবে তোমরা যা করো, আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন। (সূরা নিসা : ১৩৫)।

সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে শাসক-শাসিত, ধনী-গরিব, ছোট-বড় এবং আপন-পরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান; এ ব্যাপারে কোনো তারতম্য নেই। তাই বিচারকারীর উচিত পরকালের শাস্তিকে ভয় করা। শেষ বিচারে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর কথা মনে করে বিচারকার্য সমাধা করা।

মন্তব্য করুন