পিআর পদ্ধতি অন্ধকারের উপর অন্ধকার: ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী

অনেকে আর ইসলামি না কল্যাণ রাষ্ট্র চায়

অনলাইন ডেস্ক : তাহরিকে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের আমীর ড. মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী পীর জৈনপুরী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আজকে তথাকথিত রাজনীতিবিদদের মত আমার দেশের অনেক আলেম-ওলামা বা ডানপন্থী রাজনীতিবিদরাও ইসলামের আদর্শ বাদ দিয়ে এখন পশ্চিমা আদর্শ ধরছে। ওনাদের অনেকে আর ইসলামী রাষ্ট্র চায় না। কল্যাণ রাষ্ট্র চায়।

ওনাদের অনেকে এখন আবার নতুন আবিষ্কার পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চান। আলেমরা একবার চিন্তা করলেন না, এমনিই তো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ইসলাম সমর্থন করে না। ওর মধ্যে আবার পিআর। এটা হচ্ছে অন্ধকারের উপর অন্ধকার।

সম্প্রতি বিশিষ্ট এই ইসলামী বক্তার মাহফিলে দেওয়া একটি বক্তব্য ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে তিনি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থাকে ইসলামী শরিয়াত-পরিপন্থী বলে মন্তব্য করে এর কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, এই যে পিআর পদ্ধতি। কিছু মৌলভী সাব চেউয়া মাছের মত লাফাচ্ছে। ‘উই ওয়ান্ট পিআর সিস্টেম’। আমরা পিআর পদ্ধতি চাই। আমরা যেখানে চাচ্ছি সংস্কার আর সংস্কার হবে কোরআন সুন্নাহ দিয়ে। সেখানে এই বিকৃত পশ্চিমাদের মতাদর্শের একটা ভুঁইফোড় সিস্টেম হচ্ছে পিআর পদ্ধতি। এটা কেমনে চাই আমরা?

শরিয়তের কঠিন নির্দেশ হচ্ছে, নেতা কে আপনার তাকে চিনতে হবে। কোন চোর-ডাকাত, শয়তান, লম্পট, শেরেকবাদী, কুফরবাদী, মুনাফেক, দুর্নীতিবাজ, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী এইরকম বেনামাজি, সুদখোর, ফাসেক-ফাজের মুসলমান নেতা হতে পারে না। কিন্তু আপনি যদি পিআর পদ্ধতিতে যান তা আপনার নেতা যে কে হবে? আপনার কিসমতে যে কোন পোড়া কপালওয়ালা আছে এটা আপনি বুঝবেন কেমনে? এটা অনেকটা জুয়া খেলার মত, কে যে ভাগ্যে পড়ে ঠিক নাই। এটা খুবই জঘন্য একটা বিষয় বলেন তিনি।

পিআর সম্পর্কে সতর্ক করে ইসলামী এই বক্তা বলেন, রাসুলুল্লাহর (সাঃ) তাবেয়ি মোহাম্মদ ইবনে সিরিন রহমাতুল্লাহ বলেছেন, যাদের কাছ থেকে দ্বীন শিখবা আগে তাদেরকে দেখো- তারা ঠিক আছে কিনা। ঠিক একইভাবে যাদের পিছনে হাঁটবা- ওই নেতাগুলো ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে। এখন আপনি যদি অন্ধকারে থাকেন তাহলে কি আপনি চিনতে পারবেন আপনার নেতা? দেখা গেল আপনি নেতা বানায় রাখছেন একজন নুরুল ইসলাম। কিন্তু দেখা গেল এই লোকটা পিআর পদ্ধতিতে আপনার নেতা হল না। নেতা হল কোন চ্যাটার্জি কিংবা ব্যানার্জী। তাহলে আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রেই ইসলাম থেকে আদর্শ নিতে হবে। ইসলামের সুমহান আদর্শের বাইরে চলার কোন সুযোগ নাই।

আমার আফসোস এই বাংলাদেশী মুসলমানদের জন্য। এরা রাসুলুল্লাহর (সাঃ) আদর্শের অনুসরণ করে না। পশ্চিমাদের আদর্শ অনুসরণ করে। পোশাক-আশাক, শিক্ষা, সংস্কৃতি- সব পশ্চিমা ধাঁচে। খাওয়া-দাওয়া, ওঠা-বসা সব পশ্চিমা ধাঁচে। তো পশ্চিমাদের আদর্শ কি?

আমি আগে বিভিন্ন লেকচারে বলেছি, তিনটি স্তম্ভের উপর পশ্চিমা আদর্শ দাঁড়ায় আছে। একটা হচ্ছে ধ্বংসপ্রাপ্ত রোমান সভ্যতা। আরেকটা হচ্ছে গ্রিক দার্শনিকদের বিকৃত দর্শন। হোমার, সক্রেটিস, অ্যারিস্টোটল এবং প্লেটো- তাদের যে দর্শন এটা। তৃতীয়টা হচ্ছে- সোফিস্ট বা যুক্তিবাদীদের মনমস্তিস্ক প্রসূত যুক্তি। এই তিনটা মিথ্যা স্তম্ভের উপর পশ্চিমা দুনিয়ার সভ্যতা দাঁড়ায় আছে। আর তারাই কিনা বলে আমরাই হচ্ছি মোস্ট সিভিলাইজড তথা খুব সভ্য। চোরের মার বড় গলা।এই কথাটা বেশি বলে ইংরেজরা’ বলেন ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী।

তিনি আরও বলেন, ইংরেজদের ইতিহাস দেখেন। এই উপমহাদেশে চুরি করতে আসার আগে কি ছিল তাদের? যা কিছু চুরি-চামারি, লুটপাট করছে উপমহাদেশ থেকে করছে। আর সম্পদগুলো অন্যদেরটা নেয় নাই মুসলিমদেরটা নিয়েছে। মোগল সাম্রাজ্যের সম্পদগুলোকে চুরি করেছে, ঢাকার নবাবদের সম্পদ চুরি করেছে। সোনারগাঁওয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্যবান জিনিসগুলো চুরি করেছে। উপমহাদেশে অধিকাংশই মুসলিমদের সম্পদ চুরি করেছে। বর্তমান বাজার মূল্যে ইংরেজরা যা চুরি করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ঔপনিবেশিক যুগে তার পরিমাণ হচ্ছে ৪৩ ট্রিলিয়ন ডলার। ব্রিটেনকে একবার না ১০ বার বিক্রি করলেও আমাদের থেকে যা চুরি করে নিয়ে গেছে, সেই ঋণ শোধ করতে পারবে না। চোরের জাতি বলে- ‘আমরাই হচ্ছি সিভিলাইজড নেশন’ তথা সভ্য জাতি। এটা সভ্যতা না বড় অসভ্যতা? আমরা এখন সভ্যতা খুঁজি তাদের কাছে। অথচ আল্লাহ বলে দিয়েছেন মুহাম্মদ (সাঃ) এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।ই

মন্তব্য করুন