পাহাড়ের জুমের পাকা সোনালী ফসল কাটা ব্যস্ত আদিবাসীরা

শৈলুমং মার্মা, বান্দরবান : পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসীর জনগোষ্ঠীদের পাহাড়ের ঢালে জংগল কেটে এক প্রকার চাষাবাদ করা পদ্ধতিই হল জুম চাষ। জুমের ধান পাকার সময় হওয়াই পাহাড়ের নতুন ধান কাটার শুরু হয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ীদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সহায়ক ও আদিম কালের চাষাবাদ জুম চাষ। বর্তমানে জুম চাষ অনেকাংশে কমে এলেও পাহাড়ের উপরে বসবাসকারীরা এখনো বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীর জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির অভাবে অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল হতে হয় এখানকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের।

এসময় পাহাড়ে বেশিরভাগ জুমের সোনালী ধান পেকে যাওয়ায় কৃষকেরা পাকা ধান কেটে ফসল সংগ্রহ করা শুরু করেছে।
রুমা উপজেলা গালেংগ্যা ইউনিয়ন, ৩নং ওয়াড় দলুন ঝিরি পাড়া ও হ্লাফউ পাড়া, সেপ্রু পাড়া, ছাংও পাড়া ও কলাই ম্রো পাড়া,কাপ্রু ম্রো পাড়া বাসী আরো ৬ নং ওয়ার্ডে, পূর্ণবাসন পাড়া এবং বাগান পাড়া বাসাদই পাড়া বিভিন্ন জায়গায় নারী-পুরুষ মিলে হাশি খুশিতেই পাকা ধান কাটার শুরু করেছে। এসময় জুমের মালিক বলেন,যে ৪ হাড়ি থেকে শুরু কেউ কেউ ১৫ হাড়ি পরিমান ধান জুমে লাগায়। জুমের পাকা ধানগুলো সেপ্টেম্বর মাস থেকে ধান কাটতে শুরু করেন। স্হানীয়রা আশা করেন যে পরিমাণ মত ধান পাওয়ার । একই ভাবে পাশ্ববর্তী পাড়ার কলাই ম্রো পাড়া এবং কাপ্রু ম্রো পাড়া দের জুমে ধান কাটতে শুরু করেছে। এবং ধান ছাড়াও জুমের তিল, ভূট্টা, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, সাদা কুমড়া, বেগুন, টক পাতা, হলুদ ও আদা সহ বিভিন্ন মিশ্রণ ফসলের চাষ করা হয়। এছাড়াও।

জুম চাষ জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস্যর পাশাপাশি পাহাড়ের আদিবাসিদের ঐতিহ্য ধরে রাখতেও মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (জনাব মোঃ ফরিদুর হক) জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের কৃষি প্রশিক্ষণ, মাঠপর্যায়ের কৃষি পরামর্শ ও বিভিন্ন কিটনাষক সহযোগিতা দেয়ার কারনে, কৃষকেরা এখন চাষাবাদ সম্পর্কে জানে। কৃষি প্রশিক্ষণের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করলে জুম চাষ সহ ফসলের লাভবান হতে পারবে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি পরামর্শে জন্য আমরা সব সময় আছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ( জনাব মোঃফরিদুর হক) আরো জানান এবছর উপকুল আবহাওয়া বিশেষ করে পাহাড়ের জাতীয় ধান ভালো হয়েছে। আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে কৃষকেরা জুমের পাকা ধান কাটার শুরু করেছে, অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফসল সংগ্রহের কাজ চলবে । সেপ্টেম্বর-অক্টোবর জুড়ে চলে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ। এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব পালন করা হয়।

জুমে মালিক আরো জানান যে চলতি মৌসুমে জুমচাষে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। “এপ্রিল-মে” মাসে সময়মতো বৃষ্টি পাওয়ায় এবং পরে যথাসময়ে রোদ মেলার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। পাহাড়ে মাইক্রো ক্লাইমেট ভিন্নতার কারণে কোথাও আগে কোথাও পরে ধান পাকে। তবে এবারের জুম ফসল আশানুরূপ হবে বলে আমরা মনে করছি।” তিনি আরও জানান, জুমে স্থানীয় বিভিন্ন জাতের ধান যেমন— বড় ধান, মংটং, গেলন ধান, কালো বিন্নি, লাল বিন্নি, সাদা বিন্নি, লেকচু ধান ইত্যাদিন ধান লাগানো হয়—স্থানীয়রা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ জাতের বীজ সংরক্ষণ করে আসছেন বলে জানান।

মন্তব্য করুন