
রাইট টু ফ্রিডমের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি মাইলামের সাক্ষাতে ড. ইউনূস
অনলাইন ডেস্ক : প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশ করা সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সংলাপ শেষে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ (জুলাই চার্টার) স্বাক্ষর করবে। অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদের সুপারিশগুলোর কিছু অংশ বাস্তবায়ন করবে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার। নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইট টু ফ্রিডম’ এর প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি মাইলাম গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এ সময় ‘রাইট টু ফ্রিডম’ এর নির্বাহী পরিচালক জন ড্যানিলোউইচ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই কথা জানানো হয়েছে।
সাবেক দুই কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম ও জন ড্যানিলোউইচ প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসকে রাইট টু ফ্রিডমের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তার অংশ হিসেবে তাদের প্রচেষ্টার পরিকল্পনার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন। প্রফেসর ইউনূস রাইট টু ফ্রিডমের কাজ এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে এগিয়ে নিতে সহায়তা প্রচেষ্টার জন্য তাঁদের প্রশংসা করেন।
মাইলাম ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূত ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশে ব্যাপক সংস্কার এবং একটি সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বড় সুযোগ এনে দিয়েছে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জন ড্যানিলোউইচ। তিনি বলেন, ভুয়া খবর ও ভুল তথ্যের বিপদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ইতিবাচক বয়ান এবং জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ড. ইউনূস কূটনীতিকদের বলেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশকৃত সংস্কারের ওপর সংলাপ শেষে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ স্বাক্ষর করবে। ‘জুলাই চার্টার আমাদের পথ প্রদর্শন করবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদের সুপারিশগুলোর কিছু অংশ বাস্তবায়ন করবে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের আগে কম সংস্কারে সম্মত হলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে। অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক দুই কূটনীতিকের সাক্ষাতে বর্তমান বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট, আগের আমলে চুরি যাওয়া কোটি কোটি ডলার উদ্ধার, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রধান উপদেষ্টার প্রচেষ্টাসহ নানা বিষেেয় আলোচনা হয়।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেস্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর বা সামনের বছর মার্চ নাগাদ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। যদি সংস্কার কাজ যথাযথভাবে শেষ হয়, তবে ডিসেম্বরেই সেটা করা যেতে পারে। নইলে কিছু দিন বিলম্ব হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে গত বুধবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব পেয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আমার কোনও ধারণাই ছিল না যে আমি সরকারের নেতৃত্ব দেবো। সরকার পরিচালনার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার নেই। তবে সব স্থিতিশীল হওয়ার পর আমরা সবকিছু সংগঠিত করতে শুরু করি।
দেশের অর্থনীতি ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য বলে দাবি করে ড. ইউনূস বলেন, অর্থনীতি, শান্তি ও শৃংখলা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অর্থনীতির অবস্থা এতটা ভয়াবহ, যেন এর ওপর দিয়ে ১৬ বছর ধরে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সাত মাস হতে চললেও আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন না সাধারণ মানুষ। উল্টো তাদের ধারণা, নিরাপত্তা বরং কমেছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনূস বলেন, ভালো পরিস্থিতি তো আসলে আপেক্ষিক বিষয়। গত বছরের একই সময়কালের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখবেন, পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। এখন যা হচ্ছে, সেটা অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। দেশের বর্তমান অস্থিতিশীলতার জন্য সাবেক সরকারই দায়ী।
পলাতক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলেও এখনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা, প্রশ্ন করলে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা এই সিদ্ধান্ত তাদের। আর কে অংশগ্রহণ করতে পারবে সেটা যাচাই করে দেখবে নির্বাচন কমিশন। আমার তো এখানে কিছু বলার নেই।
এদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বিশেষত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার পৈতৃক বাসভবন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ধ্বংসের পাশাপাশি দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের জন্য অন্তর্র্বতী সরকারকে দায়ী করেছেন তারা। তাদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার এসব নৃশংসতাকে ন্যায্যতা দিচ্ছে।
তবে মুহূর্তমাত্র বিলম্ব না করে এই অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে ড. ইউনূস বলেছেন, দেশে আইন আছে, আদালত আছে। তারা অনিরাপদ বোধ করলে সেখানে যাক। বিবিসির কাছে গিয়ে অভিযোগ করার কী আছে! তারা থানায় গিয়ে অভিযোগ করে দেখুক আইন নিজস্ব গতিতে চলছে কিনা।ই