
অনলাইন ডেষ্ক : বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১১তম দিনের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছেন তারা।
হাজারো শিক্ষক বিনা বেতনে পাঠদান করলেও বারবার তাদের আশ্বাস দিয়েই দায় সেরেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবারের আন্দোলনে শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর আবরার সিআর আবরার তাদের সাথে সাক্ষাৎ না করে বরং অসম্মানজনক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, বছরের পর বছর ধরে সরকারের কাছে জাতীয়করণের দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত বাস্তব কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে শিক্ষকরা চরম অনিশ্চয়তা ও অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। শিক্ষক নেতারা বলেন, দেশের হাজারো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় কর্মরত শিক্ষকরা মাসের পর মাস বিনা বেতনে কাজ করছেন। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সামান্য সম্মানী পেলেও তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামী শিক্ষা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সরকারের অবহেলায় এই শিক্ষকরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা বলেন, আমরা বারবার আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেই। এবারও যদি জাতীয়করণের ঘোষণা না আসে, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পর অনশন শুরু করব।
শিক্ষকরা দাবি জানান, জাতীয়করণের পাশাপাশি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার কাঠামো ও প্রশাসনিক স্বীকৃতি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শিক্ষকরা ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা পান এবং প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় ঘটানো যায়। সরকার তাদের দীর্ঘদিনের দাবি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে, অন্যথায় তারা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের বিষয়ে সরকারের আশ্বাসের নয় মাস পেরিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন কর্মসূচিতে থাকা শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেন, আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করাকে তাঁরা প্রতারণা মনে করছেন। অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা মাদরাসাশিক্ষকেরা নানা সেøাগান দেন। এর মধ্যে- ‘প্রাইমারি জাতীয়করণ, আমরা কেন বিনা বেতন’, ‘অবহেলার ৪০ বছর, মানুষ বাঁচে কত বছর’, ‘চাকরি আছে বেতন নাই, এমন কোনো দেশ নাই’।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে আসা শিক্ষক শিউলি আক্তার বলেন, ১১ দিন ধরে আন্দোলনে আছি। ছোট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে আসছি। সরকার তো আমাদের কষ্ট বোঝে না। তা যদি বুঝত, তাহলে অবশ্যই জাতীয়করণ দিয়ে দিত। আর কত কষ্ট করব? আর ভালো লাগতেছে না আমাদের। আমাদের দাবিগুলো সরকার মেনে নিক। চক্রান্তের কারণে জাতীয়করণের বিষয়টি আটকে আছে বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
বগুড়ার শাহজাহানপুর থেকে এসেছেন দারুস সালাম স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমান বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে আমরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আমাদের বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেউ বাস্তবায়ন করেনি। সবশেষ এই সরকারও আমাদের জাতীয়করণের আশ্বাস দিয়ে বাস্তবায়ন করছে না। আমাদের আবার রাস্তায় নামতে হলো।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্য জোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম বলেন, বুধবার তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কেউ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেনি। তাঁদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। আজ তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। এখন মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের ডেকেছে। শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল রওনা দিয়ে গেছে। তাঁরা দেখবেন, সমাধান পান কি না। গেজেট না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
শরীয়তপুরের জাজিরার বরকান্দিয়া ইয়াদ আলী ইসলামিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আলী আকবর বলেন, প্রথম ধাপে ৩১৫টি মাদরাসা জাতীয়করণ, ১ হাজার ৮৯টি মাদরাসা এমপিওভুক্তকরণের জন্য কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই করা হয়নি।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, সরকার আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করায় শিক্ষকেরা হতাশ। অতি দ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকেরা বিভিন্ন দাবি জানান। এগুলোর মধ্যে আছে- অনুদানভুক্ত ও অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন। ১ হাজার ৮৯টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের লক্ষ্যে যাচাই-বাছাইকৃত ফাইল দ্রুত অনুমোদন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক পদ সৃষ্টি। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার জন্য আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন।ই








