
হলফনামা বিশ্লেষণ :
নির্ভরশীলরাও সম্পদশালী! * কারও আয় বেড়েছে ২১ গুণ
খবর ডেস্ক :
চট্টগ্রামে আ.লীগের ৫ এমপির আয় ও সম্পদ বেড়েছে
চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাঁচ সংসদ-সদস্যের (এমপি) আয় ও সম্পদ দুটোই বেড়েছে। তাদের ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদও বেড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক নারী এমপিসহ পাঁচ এমপির দাখিল করা হলফনামা এবং আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ সম্পদ বিবরণী বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা) আসনের এমপি এমএ লতিফের সম্পত্তি ১২ গুণের বেশি বেড়েছে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা। আর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ লাখ টাকার।
টানা তিনবার বিজয়ী লতিফের সম্পত্তি ও আয় দুটোই বেড়েছে। ব্যবসায়ী লতিফের আগে কৃষি খাতে কোনো বিনিয়োগ বা আয় ছিল না। এখন এ খাত থেকে তার আয় ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৭ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তার অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর আয় বেড়েছে ২১ গুণ। ২০০৮ সালের হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এবার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮০ টাকা। বাড়ি-দোকান ভাড়া বাবদ বছরে আয় ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৪ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় সাড়ে ৬ লাখ টাকা।
শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ১০৮ টাকা। চাকরি থেকে ১১ লাখ ৪ হাজার টাকা। সম্মানি ভাতা ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৮ টাকা। এ ছাড়া তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৮ টাকা।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতার চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ বেশি। স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ছাড়াও রয়েছে গাড়ি-বাড়ি। পৈতৃক সূত্রে এমপি মিতা ১১ লাখ টাকার ৫ একর ৩০ শতক কৃষিজমি পেয়েছেন। ৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ির মালিক তিনি। সব মিলিয়ে নিজ নামে প্রায় ৩৯ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। তবে তার স্ত্রীর নামে রয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি।
এর মধ্যে ঢাকায় প্রায় ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট। ঢাকার উত্তরায় ৪০ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি প্লট। এছাড়া যৌথ মালিকানায় ঢাকার মতিঝিলে ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত বিল্ডিংয়ের ৫ ভাগের ২ অংশে মালিকানা রয়েছে তার। ঢাকার পূর্বাঞ্চলে মিতার নামে ২৩ লাখ টাকা দামের ছয় কাঠা ও তিন কাঠার দুটি প্লট রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর রয়েছে ৯০ ভরি স্বর্ণ এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ৫০ ভরি স্বর্ণ। আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি (আইআইইউসি) থেকে নদভী বছরে মিটিং ও সম্মানিসহ ভাতা পান ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীসহ নদভীর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানটি থেকে বছরে ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ টাকা পান।
নদভীর ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ২২০ টাকা এবং ডিপিএস রয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৯৯৪ টাকা। রিজিয়ার নামে ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৬ টাকা এবং ডিপিএস রয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮ টাকা। নদভীর বর্তমানে গাড়ি রয়েছে ৩টি।
এগুলোর বাজারমূল্য ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ১৬৬ টাকা। গত দুই নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
চট্টগ্রামের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনির নগদ টাকার চেয়ে ব্যাংকে জমার পরিমাণ বেশি। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের প্রার্থী সনির ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজ নামে অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার ১১৫ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র স্টক একচেক্স শেয়ার ২৪ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার ৫১০ টাকা, পোস্টাল সঞ্চয়পত্র ১৫ লাখ টাকা।
এক কোটি ৮৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮ টাকা দামের মিটসুবিশি গাড়ি আছে তার। তার নামে নগরীর পাঁচলাইশে একটি ভবন রয়েছে; মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। তার বাৎসরিক আয় বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টে মিলিয়ে ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫০ টাকা। শেয়ার সঞ্চয়পত্রে এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংসদ-সদস্য হিসাবে সম্মানি ভাতা পান ২৬ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ টাকা।
অন্য আয় ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ১৭১ টাকা। ২০১৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ১২ লাখ ১৪ হাজার ৫৬৭ টাকা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিএ।