
অনলাইন ডেস্ক : মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১২টায়। এর আগে গত ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এবার আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন এবং অমাবস্যার পরের তিন দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান চলে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। প্রজনন মৌসুমের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দুটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২ দশমিক পাঁচ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। এর ফলে ৪৪ দশমিক ২৫ হাজার কোটি জাটকা বা রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়। এই ডিম থেকে উৎপন্ন রেণু বা পোনা (জাটকা) ভবিষ্যতে পরিপক্ব ইলিশে পরিণত হবে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে নদী ও সাগরে ইলিশ শিকারে যেতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছেন জেলেরা। ইলিশের প্রজনন শেষে জালে বিপুল মাছ ধরা পড়বে বলে আশা জেলেদের। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ অনেকের।
ট্রলার মেরামত ও জাল-দড়ি গুছিয়ে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করেছে বরগুনার উপকূলের জেলেরা। মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে নদী ও সাগরে ছুটবেন তারা।
নিষেধাজ্ঞার আগে ইলিশের ভরা মৌসুমে আশানুরূপ মাছ না পেয়ে ধার-দেনায় জর্জরিত জেলেরা আশায় বুক বেঁধেছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে তাদের জালে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভারতীয় জেলেরা অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করায়, মাছ পাওয়া নিয়ে রয়েছে জেলেদের শঙ্কা।
স্থানীয় জেলেদের একজন বলেন, ‘ভারতীয় ট্রলারগুলো যে আমাদের দেশে এসেছে, আমাদের সরকার সেগুলো এতো বেশি ফেরাতে পারেনি।
তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দাবি, ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মাঠ প্রশাসনের পাশাপাশি সাগরে কাজ করেছে নৌবাহিনীও।
বরগুনার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, ‘এ বছর সাগরে লুকিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা খুব কম ছিলো। আমাদের নৌবাহিনীর ১৭টি জাহাজ সবসময় বঙ্গোপসাগরে ছিলো। কতিপয় কিছু মানুষ এসেছিলো তারা ধরাও পড়েছে।ক
এদিকে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাঁদপুরের জেলেরা। জাল সেলাই ও নৌকা মেরামতে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের।
মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেরা জীবিকা হারিয়ে পড়েছিলেন চরম কষ্টে। নিষেধাজ্ঞা শেষ পর্যায়ে থাকায় জেলেদের মুখে এখন আশার হাসি। তবে নদীতে ইলিশের পরিমাণ ও দাম নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে তাদের মনে।
নিষেধাজ্ঞা মানায় নদীতে ইলিশের প্রজনন বেড়েছে বলে আশা করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘জাটকাগুলোকে যদি আমরা সংরক্ষণ করতে পারি, তাহলে ইলিশ নিয়ে চাঁদপুর জেলার যে সুনাম সেটি অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে মনে করি।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মোহসীন উদ্দীন বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম যেভাবে সফল হয়েছে, তাতে আগামী বছর আমি মনে করি ইলিশের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে।
পটুয়াখালীতেও জেলেরা জাল ও ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা মেলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে জেলেদের।
জেলেরা জানান, তারা সরকারের মা ইলিশ রক্ষার কার্যক্রম মানছেন। কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকেই জাল তুলে ফেলেছেন। তবে এ কার্যক্রম মেনে চললেও সরকারের দিক থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভোলার প্রায় তিন লাখ জেলে। মাছ ধরার জাল, নৌকা ও ট্রলার মেরামত করছেন তারা। আশা, কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ ধরে ধার-দেনা পরিশোধের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবেন আবার।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আশা করছি এবার জেলেরা মাছ পাবে। তারা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে। এবারের অভিযান সফল হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার সময়, জেলার সাত উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযানে দুই শতাধিক জেলেকে আটক ও বিপুল পরিমাণ জাল জব্দ করেছে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড।
ইলিশের বাধাহীন প্রজননের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাগর ও নদীতে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। এ সময় মাছ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো।ই









