চাঁদার দাবিতে নির্যাতন দখলবাজি, চট্টগ্রামে অপরাধ জগতে আরেক আতঙ্ক বুইস্যা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিনিধি : নাম তার শহীদুল ইসলাম ওরফে বুইস্যা। একজন পেশাদার অপরাধী। তার রয়েছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। একটি কিশোর গ্যাংও আছে তার। চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, খুন, সন্ত্রাসে জড়িত তারা। চাঁদা না দিলে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে তারা। তাদের রয়েছে নিজস্ব টর্চার সেল। অসংখ্য মামলার আসামি হয়েও অধরা বুইস্যা। তার বাহিনীর সদস্যরাও বেপরোয়া। তাদের কাছে জিম্মি নগরীর চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দারা। ওই এলাকার অপরাধ জগতের আরেক নাম ছোট সাজ্জাদ। হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে চিহ্নিত এ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত এই ছোট সাজ্জাদ। বড় সাজ্জাদের হয়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারীতে আধিপত্য বজায় রাখতে অপরাধ সংঘটিত করতেন তিনি। বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তার বাহিনী ঠিকই সক্রিয় এসব এলাকা। এর মধ্যেই নতুন আতঙ্ক হিসাবে সামনে চলে এলো একই জোনে ত্রাস ছড়ানো আরেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী বুইস্যা। ত্রাসের রাজত্ব কায়েমে ছোট সাজ্জাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর সে এবং তার বাহিনীর সদস্যরা। মামলাও ছোট সাজ্জাদের চেয়ে কয়েকটা বেশি তার বিরুদ্ধে।
চাঁদা আদায় ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কথায় কথায় ছোড়েন গুলি। বুইস্যার বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় থাকা ২০ মামলার মধ্যে ৮টি অস্ত্র মামলা। অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে জামিনে এসে আবার জড়িয়ে পড়েন অপরাধে।

স্থানীয়রা ও প্রকাশিত সূত্রে জানাযায়, আলোচিত এই সন্ত্রাসী বুইস্যা চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ এলাকার মানুষের কাছে মূর্তীমান এক আতঙ্কের নাম এখন। পুলিশ বলছে, মাদক বিক্রি ও চাঁদাবাজির টাকা দ্রুত গণনার জন্য যন্ত্রও রাখেন তিনি। আছে জাল টাকা সনাক্ত করার মেশিনও। ইতিমধ্যে তার কিছু সহযোগী গ্রেফতার হয়েছেন পুলিশের হাতে। তবে, বুইস্যা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গত ৯ অক্টোবর শহীদুলের ৩ সহযোগীর কাছে থেকে ১৩টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩টি ম্যাগাজিন, ৫৮টি বুলেট উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে, ২০ জুলাই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শহীদুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তার বেশ কয়েকজন সহযোগীর হাতে অস্ত্র থাকার ছবি ও ভিডিও আলোচিত হয়। বুইস্যা ও তার বাহিনীর সদস্যরা চাঁদা না পেলেই গুলি ছোড়েন প্রকাশ্যে। ৪ অক্টোবর বুইস্যার সহযোগী মুন্না পাঁচলাইশ বাদুরতলা এলাকায় একটি গ্যারেজের সামনে গুলি ছোড়েন। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিজয় চৌধুরীর গ্যারেজের সামনে এসে হুমকি দিতে থাকেন মুন্না। একপর্যায়ে কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি করেন। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হননি। পরবর্তী সময়ে গ্যারেজ মালিকসহ আশপাশের লোকজন ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে মুন্না পালিয়ে যান।
গত বছরের ১০ নভেম্বর চান্দগাঁও থানার পাশে একটি মোটরগ্যারেজে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন স্বয়ং শহীদুল ওরফে বুইস্যা। গ্যারেজের মালিক মারুফ খান জানান, তাদের কাছে ফোন করে প্রথমে ২০ লাখ টাকা, পরে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেয়ায় গুলি করা হয়। একই বছরের ১৯ অক্টোবর বুইস্যা ও তার সহযোগীরা মনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করেন।
চান্দগাঁও বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকার একটি ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করতেন বুইস্যা। গত ২১ জুলাই সেখানে অভিযান চালিয়ে তার ১১ সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু দেশি অস্ত্র, গুলি ও গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে থানা থেকে লুট হওয়া গুলি ও গুলির খোসাও ছিলো। তার আগে ২০২৩ সালের ২৩ মে কালুরঘাট এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন বুইস্যা গ্যাংয়ের লিডার শহীদুল ইসলাম। কিন্তু, তিন মাসের মাথায় জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর থেকে আর তার নাগাল পাচ্ছে না পুলিশ।
ভোলার দৌলতখান থানা সদরের মোহাম্মদ আলীর ছেলে শহীদুল ইসলাম ওরফে বুইস্যা। নগরীর পশ্চিম ষোলোশহর এলাকায় থাকেন তিনি। পড়া লেখা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। পতিত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সমাবেশে দলবল নিয়ে যোগদান করতেন তিনি। নিজেকে পরিচয় দিতেন মহানগর ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে। তবে, কোনো পদ ছিল না তার। পুলিশের তথ্যমতে, চুরি, ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধে হাতেখড়ি শহীদুল ইসলাম ওরফে বুইস্যার। গায়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়ে জটলা পাকিয়ে লোকজনের জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতেন। পরে হাতে তুলে নেন অস্ত্র; জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে। গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। নামের সঙ্গে যুক্ত হয় কিশোর গ্যাং নেতা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে আসছেন।ই

মন্তব্য করুন