
স্টাফ রিপোর্টার: ২৭৮ নং চট্টগ্রাম -১ মীরসরাই আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ ঘিরে ভোটের মাঠ বেশ সরগরম। নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রামে গঞ্জে আলোচনা তুঙ্গে। বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায়, জামায়াত একক প্রার্থীতে তারা আছে সুবিদা জনক অবস্থানে। অন্যান্য দলের প্রার্থীরা আছে নীরবে।
বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামীলীগ বিএনপি সমানে সমান লড়াই করেছে। জামায়াতে ইসলামী ছিল অনেক পিছিয়ে। এবার আ’লীগ মাঠ ছাড়া হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বিএনপি। তবে এবার জামায়াতে ইসলামী সুসংগঠিত হয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের আছে বিশাল কর্মী বাহিনীর পাশাপাশি মহিলা কর্মী বাহিনীও মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে চোখে চোখ রেখে নির্বাচনী মাঠে বিএনপির সামনাসামনি থাকবে জামায়াত।
উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভা নিয়ে গঠিত উপজেলার এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১২০জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬শত ৬৬ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪শ ৫১ জন এবং এর মধ্যে হিজড়া ভোটার আসছে ৩জন।
এই আসনে আ’লীগের হেভিওয়েট নেতা ৫৪ বছরে ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন ছয়বার, বিএনপির ওবায়দুল হক খন্দকার ও এম এ জিন্নাহ দুইবার করে এবং জাতীয় পার্টির আবু সালেক একবার নির্বাচিত হয়েছেন।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুর রহমান রুহেল আওয়ামী লীগের আমিও ডামি নির্বাচনে জয়ী হন।
১৯৯৬ সালে ১২ জুন ৭ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আ’লীগের মোশাররফকে ৪২৯৩ ভোটে পরাজিত করে জয়ী হন।
জামায়াতের সংগঠিত প্রস্তুতি: ডাকসু জাকসুতে ছাত্র শিবিরের ভুমিধ্বস বিজয়ের পর উজ্জীবিত নেতাকর্মীদের নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ডেপুটি এ্যাটর্নী জেনারেল এডভোকেট সাইফুর রহমান ইতোমধ্যে পুরো উপজেলা বিরামহীন প্রচারণায় চমক দেখাচ্ছেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জামায়াত মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট সাইফুর রহমান বলেন, “মীরসরাইকে একটি টেকসই ও মানবিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলবো। সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটিয়ে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।” নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচারণায় বেশ সুবিধা জনক অবস্থানে আছে জামাত প্রার্থী। ভোটারেরা মনে করছেন বিএনপি কোন্দল ঠেকাতে না পারলে উজ্জবিত জামাতে নেতাকর্মীরা যদি শেষ সময় পযন্ত ঠিকে থাকতে পারে তাহলে ইতিহাসের বাক বদল হতে পারে।
বর্তমানে মীরসরাইয়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক দুই যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আমিন ও নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘাত চরমে উঠেছে। এই গ্রুপিংয়ের জেরে কয়েকটি হত্যাকাণ্ড, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, পহেলা বৈশাখে সশস্ত্র মিছিলসহ একাধিক সহিংস ঘটনায় জাতীয় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বার বার। কেন্দ্রীয় বিএনপি ৫ শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কার করেও তাদের আধিপত্য থামানো যাচ্ছে না। এসব নেতিবাচক প্রচার ভোটের মাঠে বিএনপির জন্য বড়ই ক্ষতিকর।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের বাবা কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মনিরুল ইসলাম ইউসুফের বাড়িতে বিএনপির চেয়ারম্যান গ্রুপের নেতাকর্মীরা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও সাবেক এমপি গোলাম আকবর খন্দকারকে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধতা থেকে সেনাবাহিনী এসে উদ্ধার করে।
এর পর থেকে গ্রুপিং রাজনীতি আরো প্রকট হয়। ফলে প্রার্থী তালিকা হচ্ছে দীর্ঘায়িত । বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন: নুরুল আমিন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান (বহিষ্কৃত), শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক এমপি এম এ জিন্নাহ, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ, ক্লিপটন গ্রুপের ডিএমডি মহিউদ্দিন চৌধুরী, ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন, আমেরিকা বাফেলো দক্ষিণ বিএনপি যুগ্ম সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার বেলাল উদ্দিন, প্রবাসী পারভেজ সাজ্জাদ, চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কর্মাসের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন, নজরুল গবেষক ড. কামাল উদ্দিন, সাবেক এমপি দুই সন্তান আইরিন পারভিন খন্দকার ও এমদাদ খন্দকার, আব্দুল আওয়াল চৌধুরী, জিয়াদ আমিন চৌধুরী, মাঈন উদ্দিন মাহমুদ, সরওয়ার উদ্দিন সেলিম। তবে এত সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলীয় কোন্দল বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একাধিক প্রার্থী ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে সংবাদ মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। কেউ কেউ আবার দলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন সন্ত্রাস বা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া হয়।
আলোচনায় আছেন তরুণ উদ্যোক্তা এলাকায় দানবীর হিসাবে পরিচিত, শিক্ষানুরাগী সমাজসেবক আমেরিকান প্রবাসী বাফেলো দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার বেলাল উদ্দিন। তিনি ১৪ নং হাইতকান্দি ইউনিয়নের সাবেক জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ২৮ বছরের সফল চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল মালেক মালেকের সুযোগ্য সন্তান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব বাফেলো থেকে বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বলেন আমি মনোনয়ন যোগ্য দাবীদার। গত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামে হামলা মামলায় আমি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। আমিই মীরসরাই বিএনপি থেকে মনোনয়নের দাবীদার।
অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: এডভোকেট ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী, খেলাফত মজলিস: মাওলানা জাফর উল্যাহ নিজামী, ইসলামী ফ্রন্ট: আব্দুল মান্নান, এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি): কেন্দ্রীয় যুগ্ম সচিব অধ্যাপিকা সাগুফতা বুশরা মিশমা প্রার্থী।
ভোটের সমীকরণ কী বলছে?
আওয়ামী লীগ যদি অংশগ্রহণ করতে না পারে, তবে তাদের বিশাল ভোট ব্যাংক কোন দলের বাক্সে যাবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। জামায়াত ও ইসলামী দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে এডভোকেট সাইফুর রহমান শক্তিশালী প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামে, তাহলে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।