
অনলাইন ডেস্ক: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব) মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালনের সময় বেনজীর আহমেদ গুমে জড়িত কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করতেন। সে সময় র্যাবে কর্মরত এমনই এক কর্মকর্তার বিষয়ে প্রতিবেদনে তার ‘কর্মদক্ষতা খুবই সন্তোষজনক’ এবং ‘নেতৃত্ব উচ্চমানের’ বলে প্রশংসা করেছেন বেনজীর। ওই কর্মকর্তা বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
গুম কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়। গতকাল সোমবার এ অধ্যায়টি গণমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর আগে গত ৪ জুন প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে গুম কমিশন।
‘প্রশ্রয়মূলক প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি’ শিরোনামের এ অধ্যায়ে বলা হয়, গুমের ঘটনাগুলোর প্রকৃতি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, এগুলো একক ব্যক্তির বিচ্ছিন্ন কাজ ছিল না। বরং প্রতিটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইউনিটের একাধিক সদস্যের অংশগ্রহণ ছিল, যা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অজান্তে হওয়া প্রায় অসম্ভব। এসব ইউনিটে গোয়েন্দা সংস্থার নিজস্ব সদস্যরা নিয়মিতভাবে নিযুক্ত থাকতেন, যাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিল সহকর্মীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে ঊর্ধ্বতনদের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া। তা সত্ত্বেও যদিও সংশ্লিষ্ট সময়কালে অপরাধের মাত্রা ছিল ব্যাপক ও বহুলচর্চিত, পর্যালোচনা করা কোনো ফাইলেই ‘গুম’ শব্দটি উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি। মনে হয় যেন এই সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা কখনো এমন কোনো অপরাধে জড়িতই হননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় গুমে জড়িত কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করতেন বেনজীর আহমেদ। উদাহরণস্বরূপ তৎকালীন র্যাবে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তার বিষয়ে প্রতিবেদনে বিশেষভাবে প্রশংসা করে বেনজীর লিখেন, তিনি ‘স্ব-উদ্যোগে’, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে’, ‘ইসলামি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী, চোরাচালান এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের’ বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পরিচালনা করেন। প্রতিবেদনে আরো জোর দিয়ে বলা হয়, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘কোনো নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যায়নি’।
এ অধ্যায়ে বলা হয়, বাংলাদেশে সংঘটিত গুমের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কিছু নয় বা কেবল কয়েকজন কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতার ফল নয়। বরং এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ফল, যেখানে এসব অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে, স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরস্কৃতও করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় পক্ষই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ৫ আগস্ট ২০২৪-এ সরকার পরিবর্তনের পরও এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি বহাল আছে এবং পূর্ববর্তী কাঠামো অনেক ক্ষেত্রে আগের মতোই কাজ করছে।
গুম কমিশনের প্রকাশ করা ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী, তরুণসহ বিভিন্ন বয়সি নাগরিকদের গুম করে রাখার বর্ণনা তুলে ধরা হয়। ভাগ্যক্রমে যারা প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন; তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ডিজিএফআই, র্যাব ও সিটিটিসির গোপন আস্তানায় যাদের অন্তরীণ রাখা হয়; তুলে ধরা হয় সেসব নির্যাতিতদের বক্তব্যও। মানবতাবিরোধী এসব গোপন নির্যাতনের অন্ধকার কক্ষগুলোতে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অধস্তনদের সঙ্গেও কথা বলেছে। যারা কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের একটি অংশ ইচ্ছার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।আ:প্র।