
সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক : বাংলাদেশের এক বিমানঘাঁটি নিয়েই ঘুম হারাম নরেন্দ্র মোদির। একদিকে পাকিস্তান অন্যদিকে নেপাল, সাথে ভুটান,শ্রীলঙ্কা তো আছেই। এবার বাংলাদেশ থেকে চেপে ধরার আশঙ্কায় দিশেহারা দিল্লি।
দিল্লির সেবাদাসী হাসিনার পতনের পর ভারতের চোখে চোখ রেখে একের পর এক পদক্ষেপে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এতে মোদি এখন পাগলপ্রায়। ভারত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জমের মতো যে ভয় পায়, ভারতীয় মিডিয়ার অতিরঞ্জিত খবর ও রাজনীতিবিদদের হুঙ্কার শুনলেই তা বোঝা যায়।
বাংলাদেশের লালমনিরহাটে একটি সম্ভাব্য মাল্টিফাংশনাল বিমানঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, মূলত এমন খবরেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভারত। এই বিমানবন্দরটিকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি ভারতের ‘চিকেন নেক’ করিডোরের নিকটবর্তী হওয়ায় দিল্লির উদ্বেগ বাড়ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা ও উদ্বেগ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। কিছু মিডিয়া দাবি করেছে, প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ থাকলে এটি ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। অন্যদিকে, ভারতের এই উদ্বেগ ও হুমকিকে পাত্তায় দিচ্ছে না বাংলাদেশ।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যম অনলাইন এনডিটিভির বিশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ লালমনিরহাটে বিমানবন্দর চালু করলে ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ নেবে ভারত। লালমনিরহাটে বিমানবন্দর চালু করার ঘোষণার পর ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহরের পুরোনো একটি বিমানবন্দর সংস্কারের কাজ শুরু করেছে দেশটি। এটি বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত হলেও ধারণা করা হচ্ছে- যুদ্ধকালীন সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমানগুলোর উড্ডয়ন, অবতরণ এবং জ্বালানি ভরার সুযোগ করে দেয়ার সুবিধাযোগ্য করে তোলা হচ্ছে।
এতে বলা হয়, চীনের সহযোগীতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার লালমনিরহাটে অবস্থিত একটি বিমান ঘাঁটি পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। যেটি রংপুর বিভাগে অবস্থিত। যা ভারতীয় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের কাছে উদ্বেগের বার্তা দিয়েছে।
তারা মনে করছে, লালমনিরহাটের বিমান ঘাঁটিটি পুনরায় সক্রিয় করার ফলে আক্ষরিক অর্থেই দিল্লির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে বেইজিং। কেননা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ওই বিমান ঘাঁটির দুরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। এছাড়া শিলিগুড়ি করিডোর থেকেও লালমনিরহাটের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। যেটি মাত্র ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত ভূমি নিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই করিডোরটি চিকেন নেক নামেও পরিচিত। যার পশ্চিমে নেপাল এবং উত্তরে ভূটানের সীমান্ত রয়েছে। এ দুদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্থিতিশীল। এছাড়া ২০১৮ সালে বিলুপ্ত ২৪০ বছরের পুরনো হিন্দু রাজতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে নেপালের জনগণ।
চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিমান ঘাঁটিটি পুনরায় সচল করে তাহলে সেখানে চীন তাদের সামরিক সরঞ্জাম- যুদ্ধবিমান, রাডার ও নজরদারির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন কিছু রাখতে পারে বলে ভারতের শঙ্কা। এই উদ্বেগের কারণে ভারত উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহরে তিন দশকের পুরনো একটি বেসামরিক বিমানবন্দরের সংস্কার কাজ শুরু করেছে।
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে চীনের উপস্থিতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে ছিলেন হাসিনা। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে তার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সেটি ভারতের প্রতি ‘কম বন্ধুত্বপূর্ণ’। এসব বিষয় মাথায় রেখে লালমনিরহাটে পুনরায় বিমানবন্দর চালু করার বিষয়টি উদ্বেগের সঙ্গে নিয়েছে দিল্লি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা দাবি করেছেন, চীনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বাংলাদেশ লালমনিরহাটের পুরনো বিমানঘাঁটি পুনরায় সচল করতে যাচ্ছে—এ নিয়ে ভারত এখন পুরোপুরি নিশ্চিত। তার ভাষায়, এটি ভারতের কৌশলগত ভারসাম্যের জন্য একটি বড় হুমকি, বিশেষ করে শিলিগুড়ি করিডোরের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলের খুব কাছে হওয়ায়।
আনন্দবাজার পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাহা বলেন, “প্রয়োজনে বাংলাদেশেও অপারেশন সিঁদুরের মতো সামরিক অভিযান চালানো হতে পারে। গুড়িয়ে দেয়া হবে সেনাঘাঁটি বা বিমানঘাঁটি।
এদিকে, বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় কৌশলগত হাব, যা সামরিক ও বেসামরিক উভয় উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সবসময়ই স্পষ্ট ভাষায় জানানো হচ্ছে, “বাংলাদেশ নিজের স্বার্থে নিজের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা আমাদের ভূখণ্ডে কী করব, তা নিয়ে অন্য কোনো দেশের অনুমতির প্রয়োজন নেই।”
জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ভারতীয় চিকেন নেকের কাছে লালমনিরহাট জেলায় একটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর বেসামরিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। এতেই ভারতীয়দের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এখানে হামলা করার হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের দুইটি চিকেন ম্যাক দেখিয়ে তা বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে।অন্যদিকে ভারত নিজে বাংলাদেশের একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে রামগড়-সাবরুম বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু সংলগ্ন এলাকায় একটি নতুন এয়ার স্ট্রিপ তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, লালমনিরহাটের এই পরিত্যক্ত বিমানবন্দর সক্রিয় করার কাউন্টার পদক্ষেপ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের সিলেট জেলার কমলগঞ্জ সীমান্তের অতি নিকটে ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহরে একটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এই বিমানবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এখান থেকেই সে সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অভিযান পরিচালনা হয়েছে। ১৯৯০ সালে এই বিমানবন্দরটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। গত ২৬ মে ২০২৫, ভারতের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এই বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করে পুনরায় চালু করার নানা সম্ভাবনা যাচাই করে দেখে। তারা এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে একটি পরামর্শ ও প্রস্তাব পাঠাবে। সেই ভিত্তিতে এই পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করা হবে। ভারতীয় গণমাধ্যম অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বাংলাদেশের লালমনিরহাটে চাইনিজ সহযোগিতায় বিমানবন্দর সংস্কার করার কাউন্টার মেজারস হিসাবে ভারত এই উদ্যোগ নিয়েছে।ই:সূ।