
অনলাইন ডেস্ক : শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যখন কঠোরভাবে প্রয়োজন শুধু তখনই প্রয়োজনীয় পরিমাণে বল প্রয়োগ করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এ ধরনের সাত দফা নির্দেশনা সম্বলিত হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশিত হয়। গত বছর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা ছয় ছাত্র সমন্বয়কের মুক্তি দাবিতে এবং মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় তাজা গুলির ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এসব নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ গত বছর ৪ আগস্ট এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়Ñ এ রিট আবেদনে জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়টি জড়িত, যা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ কারণে রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য (মেইনটেনেবল) হতে পারে। আমাদের দৃষ্টিতে ও পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এবং রিটকারীদের আইনজীবী কর্তৃক দাখিল করা নির্দেশিকা অনুসরণ করা যেতে পারে। তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিম্নলিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করার চেষ্টা করবে।
১. বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। ২. মানুষের জীবন সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষের জীবন ও জীবনের মর্যাদা সমুন্নত রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। ৩. আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যখন কঠোরভাবে প্রয়োজন শুধু তখনই প্রয়োজনীয় পরিমাণে বল প্রয়োগ করতে পারে। ৪. দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মানুষকে সম্মান করবে, মানুষের মর্যাদা রক্ষা করবে এবং সব ব্যক্তির মানবাধিকার সমুন্নত ও বজায় রাখবে। ৫. বৈষম্যহীন : শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিক সমানভাবে উপভোগ করবে এবং কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো কারণে বৈষম্য করা উচিত নয়। ৬. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে (আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) অবশ্যই তাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। তা পালনে ব্যর্থতার জন্য তাদের পদ্ধতিগত বা আইনগতভাবে দায়বদ্ধ হতে হবে। ৭. একটি সাধারণ সমাবেশ বা মিছিল যখন ‘বেআইনি সমাবেশে’ পরিণত হয় তখন পুলিশ কী করবেÑ পুলিশ বেআইনি সমাবেশ, দাঙ্গা ও জনস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ, দ-বিধি এবং প্রচলিত আইনের প্রয়োগ চালিয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ সংবিধানের প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদের পাশাপাশি প্রচলিত আইন অনুসরণ করবে এগুলো নিম্নরূপ : (ক) সংবিধানের ৩২/৩৩(১)/৩৬/৩৭/৩৮ অনুচ্ছেদ। (খ) ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১২৭-১৩২। (গ) পুলিশ রেগুলেশন (পিআরবি) এর ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬ এবং ১৫৭ ধারা এবং (ঘ) দ-বিধির ৯৬-১০৬ ধারা।
পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরো উল্লেখ করেন, কেউ আইন লঙ্ঘন করলে পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ব্যবহারের পর তাজা গুলি ব্যবহার করতে পারে। যদি কোনো আইন লঙ্ঘন না হয় বা কোনো দাঙ্গা না হয়, তাহলে কোনো তাজা বুলেট ব্যবহার করা যাবে না। তাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের সব দিক এবং নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভিন্নমত ও গণতন্ত্র যেন হাতে-কলমে চলে এবং আইনের শাসন যেন অবশ্যই প্রাধান্য পায় সেদিকে খেয়াল রেখে পুলিশের কাজ করা অত্যাবশ্যক।
এটি বলা যথেষ্ট যে, ৬ জন সমন্বয়ককে তাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। কোনো আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই তাদের অবৈধ হিফাজতে রাখা হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে ছয় সমন্বয়ককে অবৈধ হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। যেহেতু রিট পিটিশনের দ্বিতীয় অংশ এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তবে এ আদালতের অভিমত যে, এ বিষয়ে আর কোনো আদেশের প্রয়োজন নেই। তবে উপরে বর্ণিত বিষয়টি কারণ, অ্যাটর্নি জেনারেলের দাখিল করা বিষয়বস্তু (আইন ও বিধি) বিবেচনা করে এবং হাইকোর্টের রুলস অনুযায়ী এ আবেদনটি দায়ের না করায় তা খারিজ করা হলো।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, তবারক হোসেন, জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার অনীক আর হক, মো. ওমর ফারুক, অ্যাডভোকেট মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। সরকারপক্ষে ছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মম মোরশেদ, মেহেদী হাসান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। এ ছাড়া রিটটির শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইউসূফ হোসেন হুমায়ুন, নুরুল ইসলাম সুজন, আজহার উল্যাহ ভূঁইয়া, শাহ মন্জুরুল হক, মোতাহার হোসেন সাজু, শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অংশ নেয়া আন্দোলনকারীদের ওপর তাজা গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে গত বছর ২৯ জুলাই রিট করা হয়। রিটে ‘কথিত আটক’ ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। অ্যাডভোকেট মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা বাদি হয়ে রিটটি করেন। রিটে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদি করা হয়। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে গত বছর ৪ আগস্ট রিটটি পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।ই