আয়ারল্যান্ডকে গুড়িয়ে সিরিজ বাংলাদেশের রেকর্ডের মালা গেঁথেই চলেছেন জ্যোতিরা

অনলাইন ডেস্ক : ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিজেদের হারের রেকর্ড বয়েই চলেছে বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল। সেই ধারা পাল্টে জয়ে ফেরার লড়াইয়ে গতকাল রাতেই জ্যামাইকার সাবিনা পার্কে নেমেছে মেহেদী হাসান মিরাজ-তাসকিন আহমেদরা। তবে তার আগেই আরেকটি রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ড নারী দলকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৮৪ রানের লক্ষ্য ৩৭ বল বাকি থাকতেই টপকে যায় তারা।
ঘরের মাঠে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬৭ রানের লক্ষ্যে ২৬ বল আগে জিতেছিল নিগারের দল। এছাড়া সব মিলিয়ে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয় আছে আর দুটি। প্রথম দুই ওয়ানডে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের গুরুত্বপূর্ণ ৪ পয়েন্ট পেয়ে গেছে তারা। বাংলাদেশের আরেকটি রেকর্ডগড়া জয়ে প্রথম ম্যাচের মতো রয়েসয়ে খেলে টানা দ্বিতীয় ফিফটি করেন ফারজানা হক। এছাড়া চল্লিশছোঁয়া ইনিংস খেলেন শারমিন আক্তার ও অধিনায়ক নিগার। নিগারের হাতে ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এদিন হোম অব ক্রিকেটে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে গ্যাবি লুইস বলেছিলেন, দুইশর বেশি রান করতে চান তারা। আর জ্যোতির লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষকে দেড়শর নিচে আটকে রাখতে পারলে সহজ হবে কাজ। দুই অধিনায়কের কোনোটিই মিলল না। আয়ারল্যান্ড পেল দুইশ ছুঁইছুঁই স্কোর। নিজেদের ভাবনার চেয়ে বড় লক্ষ্য পেলেও সাবলীল ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়ে ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে দলীয় সর্বোচ্চ ২৫২ রান করে স্বাগতিকরা পায় রেকর্ড ১৫৪ রানের জয়। দুই দিন পর মিরপুরেই দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়েছে তারা; সহজেই টপকে গেছে ১৯৪ রানের লক্ষ্য।
অভিজ্ঞ ফারজানা হকের ফিফটির সঙ্গে শারমিন আক্তার ৪৩ ও জ্যোতি ৪০ রানের ইনিংস খেলে ৩৭ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করেন। দারুণ অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ৩৯ বলের ইনিংসে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন নিগার। এই জয়ে সিরিজের ট্রফি জয়ও নিশ্চিত করেছে নিগারের দল। তবে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিরিজ জয়ের চেয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট পাওয়াকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘২ পয়েন্ট পাওয়া (বেশি আনন্দের)। সিরিজ জয় অবশ্যই দলের জন্য অনেক ভালো। একটা মোমেন্টাম তৈরি করা। পয়েন্টটাই আমাদের কাছে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আরও ২টা পয়েন্ট পেলাম। এজন্য আরও বেশি খুশি।
চলতি সিরিজের আগে টানা পাঁচ ওয়ানডে হেরেছে বাংলাদেশ। সবশেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে তাদের জয় মোটে একটি। টানা পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে পরপর দুই ম্যাচে রেকর্ডগড়া জয়ের পর ড্রেসিং রুমের পরিবেশও এখন আগের চেয়ে ভালো বললেন নিগার, ‘আমরা যা-ই করছি, রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে (হাসি)। হয়তো আগে করতে পারিনি, তাই এখন যা করছি, রেকর্ড হচ্ছে। ভালো লাগে। অনেক দিন ধরে এই ক্রিকেটাররা অনেক কষ্ট করছে। ম্যাচ জিততে না পারায় অনেক সময় নেতিবাচকতা বেশি থাকে। দলকে উজ্জীবিত করার যতোই চেষ্টা করেন না কেন, (নেতিবাচকতা) থাকে। দলের জন্য জয় অনেক বড় ব্যাপার। খারাপ করলে অনেক কিছু চলে আসে যে এটা নেই, ওটা ভালো না। এখনও যে খারাপ কিছু নেই, তা নয়। তবে ভালোর পরিমাণটাই এবার বেশি।
প্রথম দুই ম্যাচে তিনটি রেকর্ড। তাই প্রশ্ন এলো, শেষ ম্যাচেও কি কোনো রেকর্ডে চোখ থাকবে নিগারদের? উত্তরে আবারও ২ পয়েন্টের কথাই বলেন তিনি। একইসঙ্গে জানান হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যের কথাও, ‘আমাদের মাথায় আপাতত ২ পয়েন্ট। এর সঙ্গে হচ্ছে, আমরা যেন তাদের হোয়াইটওয়াশ করতে পারি। কখনও কোনো দলকে করতে পারিনি। এটা আমাদের দলের জন্য একটা মাইলফলক হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হবে, দল হিসেবে খেলা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলা এবং যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা যদি করতে পারে, তাহলে দিনটা আমাদের হবে।’
অবশ্য আগেও তিন ম্যাচের সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে তিন ম্যাচেই দাপুটে জয় পেয়েছিলেন নিগার, ফারজানারা। তবে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার হাতছানি এবারই প্রথম। একই মাঠে আগামী আগামীকাল সেই অভিযানে আইরিশদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তার আগে মাইলফলকে চোখ রাখার কথাও জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আজকে (গতকাল) সকালে আমি ক্রিকেটারদের যে বার্তাটা দিয়েছি, ধারাবাহিক হতে পারাই মূল। প্রথম ম্যাচে আমরা যে রানটা করেছি, সেটা যদি করতে পারি। অথবা যারা রান করেছি, তারা যদি আজকে না করতে পারি, তাহলে কিন্তু আসলে ওইভাবে মূল্যায়ন করা যায় না। তাই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দৃশ্যমান যে সমস্যাটা ছিল, শুধু ব্যাটিংয়ের কারণে অনেক ম্যাচ হেরে যাচ্ছিলাম। সে জায়গা থেকে ব্যাটারদের রান করতে পারা দলের জন্য স্বস্তির। তবে আবারও একটা প্রশ্ন, এটা আমরা পরের ম্যাচে করতে পারব কিনা। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ, যেন পরের ম্যাচেও এরকম ব্যাটিং করতে পারি।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যন্ড : ৫০ ওভারে ১৯৩/৬ (ফোর্বস ১৩, লুইস ২, হান্টার ৬৮, প্রেন্ডারগাস্ট ৩৭, ডেলানি ৩৩, পল ১০, রেমন্ড-হোয়ি ২১*, কেলি ১*; মারুফা ০/৩৮, সুলতানা ২/৩২, নাহিদা ১/৩২, রাবেয়া ০/৪২, ফাহিমা ০/২৭, স্বর্ণা ১/৬)।
বাংলাদেশ : ৪৩.৫ ওভারে ১৯৭/৫ (ফারজানা ৫০, মুর্শিদা ৬, শারমিন ৪৩, নিগার ৪০, সোবহানা ১৬, স্বর্ণা ২৯*, ফাহিমা ৪*; প্রেন্ডারগাস্ট ১/১০, ক্যানিং ১/২২, কেলি ১/৩৪, সারজেন্ট ০/৪৪, ম্যাগুয়েইর ০/৪৩, ডেলানি ২/৪৩-২)।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ : নিগার সুলতানা জ্যোতি।
সিরিজ : ৩ ম্যাচে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে।ই

মন্তব্য করুন