
নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জ-বাসীর জন্য চিকিৎসা সেবার এক প্রগতির রূপে আবির্ভুত হয়েছিল শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের দুর্গতির কারণ হয়ে উঠছে এই হাসপাতালটি। ৫০০ শয্যার এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে কিশোরগঞ্জ জেলাসহ নিকটবর্তী জেলা সমূহের রোগীরা প্রতিদিনই উন্নত ও সু-চিকিৎসার আশায় হাসপতালটিতে আসেন। বরাদ্দকৃত শয্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকেন। চিকিৎসক সংকটের কারনে চিকিৎসা না পেয়ে, ছুটতে হয় অন্যত্র। এতে হয়রানির স্বীকার হয় রোগীসহ স্বজনদের। একটা দালাল চক্র হাসপাতালের বাইরে গজিয়ে উঠা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এজেন্ট হিসেবে
দিবা-রাত্রি ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন হাসপাতালের করিডোরে। প্রতিনিয়ত এই দালাল চক্রের কারনে ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে রোগীসহ স্বজনদের।
তাছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন দেড় হাজারেরও বেশী রোগী। সম্প্রতি-কালে জেলায় ডেঙ্গু জ্বর, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট,হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। যার ফলে হাসপাতালে সেবা প্রত্যাশীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক, সেবক সেবিকারা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন । অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। শহর বা শহরতলীর কাছের রোগীরা পরের দিন এসে চিকিৎসা নিবেন বলে ফিরেও যাচ্ছেন কেউ কেউ।
জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাক্তি। সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবার বিষয়টি বিবেচনায় “শুণ্যপদের বিপরীতে জনবল চেয়ে চিঠি দেয়ার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনও পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় ২০১১ সালে স্থাপিত এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা চালু হয় ২০২০ সালে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১১৯টি, কর্মরত আছেন ৮৯ জন। বাকি ৩৩টি শুণ্যপদের বিপরীতে শুরু থেকেই ১০জন চিফ কনসালটেন্ট পদে কোন জনবল নিয়োগ নেই। অ্যানেসথেসিয়া বিভাগেও রয়েছে চিকিৎসক স্বল্পতা। যার ফলে নিয়মিত আইসিইউ ও ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসাসেবা চালু করা যাচ্ছে না। এদিকে চিকিৎসক, নার্স ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণির শ্রেণির সর্বমোট ১৪৮টি পদ শূণ্য রয়েছে। ডায়ালাইসিস বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য আসলেও রয়েছে শয্যা সংকট।
৩০ শয্যার সিসিও ইউনিটে ৭০-৮০জন রোগী ভর্তি থাকেন সবসময়। গত রবিবার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ও ওয়ার্ড সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা লক্ষণীয়। ৫০০ শয্যার বিপরীতে এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে ভর্তি-কৃত রোগীর সংখ্যা ৭৭০ জন।
বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় হাজারেরও অধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ চিকিৎসাসেবা পেতে লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘসময় । চিকিৎসকের দেখা মিললেও রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেতে হয় মেডিকেলের বাইরে গজিয়ে উঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। রোগী ও তার স্বজনদের গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। নরসিংদীর বেলাবর থেকে আসা মনিরুজ্জামান তার বাবার শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে আসেন এই মেডিকেলে, তিনি ইনকিলাবকে বলেন “শুনেছি এখানে ভালো চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়, তাই গত বৃহস্পতিবার এসেছি, এখনও কোন বেড খালি পাইনি। মেডিসিন বিভাগে রোগীর চাপ খুবই বেশী।
জেলার কুলিয়ারচর উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সোলেমান মিয়া জানান, এসেছিলাম পেটের ব্যথা নিয়ে চিকিৎসার জন্য। চলে যাবো। হাসপাতালের যে অবস্থা এখানে থাকলে রোগ আরো বাড়বে, ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। শৌচাগারের যে অবস্থা? দেখার জন্য মনে হয় কোন কর্তৃপক্ষ নেই। চিকিৎসা করেন মেডিক্যাল পড়ুরা।
কিশোরগঞ্জ সদর এলাকার দোলেনা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন,“আমার মেয়ের জ্বর ও ব্লাড সমস্যা নিয়ে আজ দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। সেবা নিতে এসে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। হাসপাতাল থেকে দুইবেলা সকালে ও রাতে দুটো ওষুধ দেয়া হয়। বাকী সব বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। এত বড় একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শয্যার তুলনায় রোগী বেশী, শৌচাগারের অবস্থা খুবই ভয়াবহ, লিফটে নেই কোন অপারেটর। ঠিকমত চিকিৎসক আসে না। হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য সরবরাহকৃত খাবারের মান খুবই খারাপ।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আবিদুর রহমান ভুঞা ইনকিলাবকে বলেন,“চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। দিনকে দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সবাইকে সেবা দিতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। রোগীর চাপ বেশী থাকায় চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমত রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, কিশোরগঞ্জের ৩৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসার নাম হচ্ছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেই তুলনায় আমাদের চিকিৎসক সংকট প্রবল। ১১৯ জন চিকিৎসকের স্থলে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৮৯ জন। চিকিৎসক সংকটের কারণে সার্জারি, আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে র্পুণাঙ্গভাবে চিকিৎসাসেবা চালু করা যাচ্ছে না। এ দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শূন্যপদে জনবল নিয়োগের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কোনা সাড়া পাওয়া যায়নি। ৫০০ শয্যা হাসপাতালের জন্য শুণপদ পুরণসহ নতুন পদ সৃজন করা খুবই জরুরী। বর্তমান সময়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর জন্য মশারি টাঙ্গিয়ে পৃথক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ওষধের কোন সংকট আপাতত নেই। তবে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় নরমাল স্যালাইনের কিছুটা স্বল্পতা রয়েছে।ই