
খবর ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে অভিযোগ জমা পড়ছে। নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী তফশিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের বাস, ট্রাক বা মোটরসাইকেল সহকারে মিছিল বা শোডাউনের সুযোগ নেই। অথচ এসবের কিছুই মানছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
তফশিলের পর বিশাল শোডাউন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এলাকায় ফিরেছেন, আবার প্রতীক বরাদ্দের আগে সভা-সমাবেশও করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়রসহ একাধিক সংসদ-সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার-প্রচারণায় নেমে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারীরা হামলার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিকদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের ১৬ আসনে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির পাশাপাশি ২২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। অভিযুক্তদের শোকজ নোটিশ দিয়ে তারা দায় সারছেন।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা ও ইপিজেড) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমএ লতিফ আচরণবিধি ভঙ্গ করে নগরীর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ৩০০ থেকে ৪০০ নেতাকর্মী ছিলেন। সড়কে তারা অবস্থান নিলে গাড়ি চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। নগরীর কদমতলী এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। লতিফের পক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী অংশ নেন এবং ভোট চান। চসিক মেয়রের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধিভঙ্গের অভিযোগ করেন একই আসনের ভোটার সৈয়দ আনোয়ারুল করিম।
এর আগে সোমবার প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় সরকারি কমার্স কলেজের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চসিক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। এ কারণে ওই এলাকায় সড়কে গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে-‘আপনি কি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন’ প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের ওপর তিনি চড়াও হন। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সিনিয়র সাংবাদিকরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানান। এ বিষয়ে মোস্তাফিজুরকে শোকজ করা হয়।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধিভঙ্গের অভিযোগ করা হয়। আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল উদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি ব্যাখ্যা তলব করে চিঠি দেন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়েছেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেব। নদভীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এর আগেও অভিযোগ জমা পড়ে।
হামলার শিকার স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারীরা : চট্টগ্রাম-১২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা সোমবার পটিয়ার ইন্দ্রপুল বাইপাস মোড় ও হাবিলাস দ্বীপের পাঁচুরিয়া এলাকায় নৌকার সমর্থকদের হামলা ও বাধার মুখে পড়েন। ইন্দ্রপুল বাইপাস মোড় এলাকায় যুবলীগ নেতা জমির উদ্দিন ও পাঁচুরিয়া এলাকায় হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির হামলায় নেতৃত্ব দেন। তারা সন্ত্রাসীদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর লাঠিসোঁটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পটিয়া থানায় মামলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল জব্বার চৌধুরী নির্বাচনি প্রচারণায় হামলার আশঙ্কায় মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, আচরণবিধি ভাঙলে কোনো প্রার্থীকে ছাড় দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, অনেক প্রার্থীর নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন না করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আসন্ন নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রার্থীর মতামত গ্রহণ করা হয়েছে এবং মতামত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।