প্রচারবিমুখ একজন সফল কারিগরি প্রশিক্ষিত সৈয়দ এমরান

লক্ষ্য সৈয়দ ইমরান টেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউট তৈরি

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাধু সেজ না সাধু হও-এই বাক্যটি সত্য করে নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনা। তেমনি একজন সখ-নষ্ঠাবান মানবিক গুণে গুণান্বিত মানুষ হচ্ছেন সৈয়দ মোহাম্মদ এমরান। যিনি নিজে সৎ থেকে জীবনের রঙ অনেকটাই পাল্টে দিয়েছেন। তাই লোকে ভালোবেসে জুড়ে দিয়েছে বেশ কিছু বিশেষণ। যার বাইরে রয়েছে তার পরিচিতি তিনি কাজের মাধ্যমে সে উপাধি ধারণ করেছেন। মানবিক এই ব্যক্তির একমাত্র চিন্তায় ভরকরেছে বৃহৎ একটা ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করা। সৈয়দ মোহাম্মদ এমরান একজন সৎ অমায়িক, পরোপকারী দানশীল ও কারিগরি ব্যক্তির নাম। বয়স তেষট্টি ছুঁই ছুঁই। এমরান সাহেবের বাড়ি চট্টগ্রামে। হাটহাজারীরোডে তার প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ফাতেহাবাদ। তিনি এখন দুটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, একটা হল আল-আমীন হাশেমী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এবং অপরটি হচ্ছে- এম এইচ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস।

কথা প্রসঙ্গে সৈয়দ ইমরান সাহেব জানালেন, সুযোগ থাকলে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন আছে, তবে তা জীবন পাল্টে ফেলার জন্য খুব জরুরি নয়। স্বল্প শিক্ষিত হয়েও কোন তরুণ কিংবা যুবক যদি কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হন, তবে তিনি পাল্টে নিতে পারেন তার নিজের জীবন। স্বাচ্ছন্দময় জীবন-যাপন নিশ্চিত করতে পারেন তার পরিবারের। অসামান্য ভূমিকাও রাখতে পারেন জাতীয় উন্নয়নে। স্বাপ্নিক সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘সৈয়দ ইমরানটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’ নামে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের। সফল হলে আবাসিক এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ১২০ জন চৌকসকারিগরি শ্রমিক দেশ-বিদেশে কাজের জন্য তৈরি হবে। টেকনিশিয়ান করেবিদেশে পাঠানো যায়, তখন তিনি ৮০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। যার যে মেধা, সেই মেধায় কাজ দিলে সে ভালো করবে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা অভিষ্টলক্ষ্যে পৌছানোর পথ সুগম করবে বলে মনে করেন সৈয়দ ইমরান। সৈয়দ ইমরান জীবনের শুরুটা ওয়েলডিংয়ের শ্রমিক হিসেবে। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ তিনি সফল একজন মানুষ। নিজের অধ্যাবশায় থেকে বদলে ফেলেছেন নিজের ভাগ্য। পরিশ্রমে যে ভাগ্যের বদল হয় তার জলন্ত উদাহরণ সৈয়দ এমরান। শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় নিজের কষ্টের কথা মনে রেখেছেন। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন আল আমিন ইঞ্জি-ি নয়ারিং ওয়ার্কস ও মেসার্স এমএইচ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস দুটি প্রতিষ্ঠান। তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক অফিসার স্টাফসহ প্রতিমাসে বেতন বাবদ খরচ করেন ৭৫ লাখ টাকা। মোট শ্রমিক ১৫০ জনের সঙ্গে রয়েছেন অফিসার স্টাফও। ওয়ার্কার্স চালানোর পাশাপাশিকর্ণফুলি গ্যাস লাইনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ক্ষুদ্র থেকে হয়েছেন একজন সফল ও সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কিন’ তারপরেও নিজের ভেতরে কোনোঅহংকার বাসা বাঁধতে দেননি। প্রচার-বিমুখ মানুষটি সমাজসেবা ও পরোপকারেনিজেকে উৎসর্গ করা সত্ত্বেও নিজেকে একেবারেই আড়ালে রেখেছেন। সহজ সরলঅমায়িক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলেও কাজের বিষয়ে তিনি খুবই সিরিয়াস। কোনোরকম কাজে অনীহা তিনি বরদাশত করেন না। আবার মিথ্যা কথা বলাকে তিনি মনে-প্রাণে ঘৃণা করেন। প্রাণবন্ত ও দীপ্তিমান এ সজ্জন মানুষটি মনে করেন ধৈর্য, সহনশীলতা, সততা ওনিষ্ঠা সফলতার মাপকাঠি। এমরান জানান, ১৯৭২ সালের শুরু থেকেই ওয়েলডিংয়ের ওয়ার্কসপে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকার তিতাস গ্যাস ক্রেন ওয়েলডিংয়েরকাজ শুরু করেন। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ৬ বছর নিষ্টা ও সততার সঙ্গে কাজ করে দক্ষতাঅর্জন করেন। ১৯৭৯ সালের শেষ দিকে তিনি ইরাকে যান। সেখানেও ওয়েলডার বসরাজেটিতে কনস্ট্রাকসনে কাজ করেন বাস্তশিল্প লিমিটেডের আফসার উদ্দিনের পক্ষথেকে। জাপানি টোহা ফারবাল ওয়ার্ক জেটির ওয়েলডিংয়ের কাজে যুক্ত থেকেসফলতা সৃষ্টি করেন। ‘৭৯ সালের শেষের দিকে ইরাকে যুদ্ধ লাগে, তখন তিনি দেশেফিরে আসতে বাধ্য হন। দেশে এসে শুরু হয় টিকে থাকার নতুন লড়াই। তবে বেশিদিন দেশে থাকা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধচলাকালীন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি আবারো ইরাকে যান। কারণ, এ সময়ওই দেশে তার বেশ কিছু কাজ অসমাপ্ত ছিল। প্রাণের দায় থেকে সেগুলো শেষ করারতাগিদ অনুভব করেন। এরপর বাস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানে ৫০০ জন ওয়েলডার বিষয়ে পরীক্ষাদেন, এর মধ্যে ১০০ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তার মধ্যে সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরানসম্মানের সঙ্গে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং ওয়েলডিং এক্সরে পরীক্ষা দেন। সেখানেদুই হাতে কাজ করার পরীক্ষা নেওয়া হয়। জীবনের পরীক্ষায় ফেল না করা এমরান সেপরীক্ষাও কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এভাবে মনে সাহস নিয়ে ১৯৯৮ সালেরাজধানী ঢাকায় নভোথিয়েটারে কাজ করেন। সেখানে বুয়েটের ইঞ্জিনিয়াররা যাকরতে হিমশিম খেয়েছেন সেই কাজ তিনি অবলীলায় শেষ করেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গ্যাস মিন প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষায় ১১ক্যাটাগরিতে ট্রেস্ট দিয়েছেন। সেখানেও তিনি কৃতকার্য হন। এরপর ১৯৯৬ সালে কাতারে যান এবং সেখানেও কাজ করে দক্ষতা অর্জন করেন। সব পাওয়ার ভিতরে নিজের একটি কষ্ট এখনো রয়ে গেছে। কষ্টটি হচ্ছে বৃহত্তর পরিসরে ওয়েল্ডিং কারখানা গড়ে তোলা। ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা হলে বা কোনো পৃষ্ঠপোশক পেলে এবং ৫ থেকে ৬বিঘা জমির নিশ্চয়তা পেলে এই কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। যেখানে ২ হতে ৩হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ঘটবে। এই পাবলিক প্রতিষ্ঠানে ৬ মাসের মধ্যে লোকনিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তিন মাসের জন্য ওরা একজন দক্ষশ্রমিক হয়ে উঠবে। কোনো বিনিয়োগকারী পৃষ্ঠপোষকের সহায়তা পেলে দেড়শতলোকের কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তখন ম্যানপাওয়ারের সঙ্গে কাজ করতে পাওয়াযাবে না। বিদেশে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কমে যাবে। দেশকে ভালোবাসলে এইকাজটা করা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। নিজের বিষয়ে বলেন, চট্টগ্রামে রিয়াদ থেকে জাপানি কোম্পানি কুবতারএকটা ট্রেনিং সেন্টার করার স্বপ্ন দেখেন এমরান। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরিকরা গেলে সেখান থেকে দক্ষ কারিগর বের করে আনা সম্ভব হবে। এদিকে চট্টগ্রামের মাদাম বিবির হাট হতে বর্যাকিয়া পর্যন্ত ৩৮কিলোমিটার গ্যাস লাইন কর্ণফুলি গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ পায়গ্যাস মিন লি.। ৩৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে সাব কন্ট্রাক্টদেয়া হয় সৈয়দ মোহাম্মদ এমরাকে। তিনি সঠিক সময়ে কর্ণফুলি গ্যাস পাইপলাইনের কাজ সমাপ্ত করেন। তবে তিনি কারিগরি প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য ১০ থেকে ২০ কোটি টাকাবিনিয়োগের পৃষ্ঠপোষক চাইলেন। যার মাধ্যমে একটি বৃহৎ কারিগরি প্রতিষ্ঠানতৈরি করা সম্ভব হবে। এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করা গেলে দেশেই কর্মসংস্থান তৈরিহবে তখন কাজের সন্ধানে বিদেশমুখীতা অনেকটাই কমে আসবে। দেশেই দক্ষকারিগর তৈরি হবে। বাংলাদেশের জন্য তার প্রত্যাশা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনে বৃহৎ একটা ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করাই তার একমাত্র ধ্যান আর সাধনা।

মন্তব্য করুন