জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্রলীগ সাথে নিয়ে গুলি চালায় বিজিবির কতিপয় সদস্য

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই-আগস্ট আ’লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের সাথে নিয়ে ছাত্র-জনতাকে দমন করতে নির্বিচারে গুলি চালায় বিজিবির কতিপয় সদস্য। এ সময় প্রকাশ্যে মাঠে থেকে ছাত্র-জনতাকে কঠোর হস্তে দমনে নির্দেশনা দেন বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা। যার ভিডিও ও স্থিরচিত্র এখনো ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্যমান। ছাত্র-জনতার রক্তে গড়া সরকারের প্রায় তিন মাস হলেও মিছিলের উপর গুলি চালানো এবং নির্যাতনের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কোনো উদ্যোগ নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বিজিবি সদর দফতরের। বরং জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার উপর ব্যাপক নির্যাতনের ভূমিকা রাখা বিজিবির অনেক কর্মকর্তাকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আ’লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যে সব বিজিবি কর্মকর্তা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় গুলি করেছেন এবং গুলি করতে সাধারণ বিজিবি সদস্যদের বাধ্য করেছেন তাদের বিরুদ্ধে গত তিন মাসেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আ’লীগ সরকারের অতি আস্থাভাজন বিজিবির কর্মকর্তারা এখনো সীমান্ত এলাকাসহ বিজিবি সদর দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এ সব কর্মকর্তাদের মধ্যে কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় ছাত্র-জনতার খুনের মামলার অনেক আসামি (আ’লীগ মন্ত্রী-এমপি, যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা) ভারতে পালাতে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিজিবির যে সব সদস্য ও কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার মিছিলের উপর হামলা-গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের জোর দাবি। যারা এ দেশের সাধারণ মানুষদের হত্যা করে আ’লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল তাদের দ্বারা দেশের সীমান্ত এলাকা নিরাপদ নয়। দ্রুত জড়িতদের চিহ্নত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর জনরোষ থেকে বাঁচতে এবং গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান বিগত আ’লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য (এমপি), দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাসহ পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে অনেকে গোপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ছেড়েছেন। দালাল ও সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবির কতিপয় কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে পালিয়েছেন এদের অধিকাংশ। পারাপারের কাজে বিভিন্ন সীমান্তে গড়ে উঠেছে একাধিক চক্র। এ চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালীদের সীমান্ত পার করে দিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিলেট, দিনাজপুরের হিলি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত ব্যবহার করেন। সীমান্ত পার হয়ে তারা ভারতের ত্রিপুরা, আগরতলা, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে অবস্থান নেন। সেখান থেকে কেউ দুবাই, কেউ জার্মানি, কেউবা যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে মোতায়েনকৃত বিজিবির কর্মকর্তা-সদস্যরা কোথায় কোথায় গুলি করেছেন এবং হতাহতের ঘটনা কী ঘটেছিল তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে গুলির ঘটনায় বিজিবির সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

মাঠ পর্যায়ের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বিজিবির সদস্যদের অনেক স্পটেই গুলি করেছে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অনেক স্পটে দেখা গেছে, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেরাও ছাত্র-জনতার উপর গুলি করছেন এবং বিজিবির সদস্যদের গুলি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে শত শত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। যারা বেপরোয়ার আচরণ করেছেন তাদেরও শনাক্ত করার কাজ চলছে।

৩ অক্টোবর বিজিবি সদর দফতরের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনবিরোধী তালিকাভুক্ত ২২ অ্যাকটিভিস্টকে গ্রেফতার করেছে বিজিবি। কিন্তু এরপরও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ আ’লীগের বহু নেতাকর্মী পালিয়েছেন। তারা কীভাবে কোন সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছেন তা জানেন না বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, দেশ থেকে পালানোর ঘটনায় বিজিবির দায় আছে। কোন সীমান্ত দিয়ে কে পালিয়ে গেছেন তা অবশ্যই তদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।ই

মন্তব্য করুন