
অনলাইন ডেস্ক : চিলে কান নিয়েছে শুনে, কানে হাত না দিয়েই চিলের পেছনে ছুটে চলেন অতিউৎসাহী কিছু মানুষ। এমনই এক দশা হয়েছে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির। তাই পতিত স্বৈরাচারের দোসর মিডিয়ার ইচ্ছাকৃত ভুল প্রচারণা কিংবা মুর্খ সাংবাদিকতায় প্ররোচিত হয়ে ড. ইউনূসের সমালোচনাও করতে দেখা গেছে কাউকে কাউকে। যা হতাশ করেছে সচেতন মহলকে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মহাম্মদ ইউনূসের দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে ঘিরে এই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কিছু ফ্যাসিস্ট গণমাধ্যম। ইংরেজিতে নেওয়া সাক্ষাৎকারটি যথাযথভাবে না বুঝেই বাংলায় ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত কিছু মিডিয়া পরিকল্পিতভাবেই এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ড. ইউনূসকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার, নির্বাচন ও সংস্কারের কাজ একসঙ্গে চলছে। তবে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো যদি চায় সংস্কার ভুলে যাও, নির্বাচন দাও, তাহলে তাই করবো।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সীমা কী হতে পারে, সে বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকার ৫ বছরের হয়। নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ সম্ভবত ৪ বছর হতে পারে। কারণ, মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়। এ সময় আল জাজিরা সিনিয়র সাংবাদিক ডক্টর ইউনূসের এর কাছে জানতে চান আপনি কি ৪ বছর ক্ষমতায় থাকবেন? প্রশ্নের জবাবে ডক্টর ইউনুস দৃঢ়ভাবে বলেন ‘আই ডিডেন্ট সে দ্যাট’ অর্থাৎ এটা আমি বলিনি, আমার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সংস্কার খুনের বিচার আর নির্বাচন দিয়ে দ্রুত সরকার থেকে সরে যাওয়া।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ৪ বছর হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বলে প্রচার করা হয় কিছু হলুদ মিডিয়ায়। আর সুকৌশলে এটাকে ইস্যু বানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ড. ইউনূসের ওপর ক্ষেপিয়ে তোলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। কারণ মানুষের মাঝে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে এমনিতেই যে জল্পনা আছে, মূলত সুকৌশলে তাতে ঘিঁ ঢালা হয়েছে।
অখচ সাক্ষাতকারে কোথাও ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ৪ বছর থাকতে চান এমন কথা বলেননি। তিনি মূলত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ৫ বছর না হয়ে ৪ বছর করার পরিকল্পনার কথা বলেন। আর এটাকেই ভুলভাবে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোট করে প্রচার করা হয় যে, তিনি ৪ বছর ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন।
তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে এও বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করাই তাদের উদ্দেশ্য। জনগণ সংস্কার না চাইলে তিনি দ্রুত নির্বাচন দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সংস্কারের সোনালী সুযোগ এসেছে।
এদিকে, আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও অনুসরণ করে দেওয়া প্রতিবেদনে বিভ্রান্তি থাকায় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমকে তা সংশোধন করতেও দেখা কিন্তু। কিন্তু ততক্ষণে ডালপালা মেলেছে বিভ্রান্তি। বিব্রত অবস্থায় ফেলা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৯) ফাঁকে আল–জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রোববার এই ভিডিও সাক্ষাৎকার গুরুত্বে সাথে সম্প্রচার করেছে আল–জাজিরা।
এদিকে, ভারতে পলাতক খুনী হাসিনার আরেকটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর কিছু গণমাধ্যম এসব ফোনালাপ এমনভাবে প্রচার করছে যেখানে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর মতো করে মিডিয়া কাভারেজ দেওয়া হচ্ছে। যা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
নাগরিক টিভিও ওই ফোনালাপটি ভিডিও আকারে প্রচার করেছে। যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে খুনী হাসিনার রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি দেখানো হয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষের মাঝে খলনায়ক হিসেবে প্রচার করতেই সুকৌশলে এভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে মিডিয়া কাভারেজ দেওয়া হচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেকে।ই