শ্রমিকদের ১৮ দাবি মেনে নিলো মালিকপক্ষ, বুধবার থেকে কারখানা চালু বিশৃঙ্খলা হলে কঠোর ব্যবস্থা -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিনিধি : দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত বৈঠকে শ্রমিকদের ১৮ দাবি মেনে নিয়েছে মালিকপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে গতকাল থেকে সারাদেশের সব শিল্পকারখানা খোলা রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শ্রমিকপক্ষ এবং মালিকপক্ষের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিউজ্জামান।

সভায় জানানো হয়, দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের ১৮ দাবি মেনে নিয়েছে মালিকপক্ষ। এগুলো হলো, টিফিন বিল প্রদান, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সব কারখানায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, শ্রমঘন এলাকায় টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে রেশন প্রদান, শ্রমিকদের আগের বকেয়া ১০ অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধ, ঝুট ব্যবসা মনিটরিং করে শ্রমিকদের মধ্যে থেকে ক্রেতা বের করা, কারখানার শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা বন্ধ করতে মনিটরিং বিষয়ে একমত হয়েছে উভয়পক্ষ।

এছাড়াও গত বছর ন্যূনতম মজুরি আন্দোলন ও বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা নিপীড়ন মামলা প্রত্যাহারের জন্য রিভিউ করে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধান করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, রানাপ্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনের বিষয়ে কমিটি গঠন, সব কারখানায় ডে কেয়ার সেন্টার নিশ্চিতের দাবি মানা হয়েছে। অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে কাজ করা, প্রভিডেন্ট ফান্ড পর্যালোচলা করে শ্রমিক মালিকের আলোচনার মাধ্যমে চালু করা এবং প্রতি বছর দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দিতে কমিটি গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ সময় শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিউজ্জামান বলেন, শ্রমিক পক্ষের ৩৫ জন প্রতিনিধি ছিলেন, মালিক পক্ষও ছিল। তাদের ১৮টি দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করেছি। আগামীকাল থেকে সব কারখানা নির্বিঘ্নে চলবে। গতকাল সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সরকারের কাছে ১৮টি দাবি উত্থাপন করে শ্রমিক পক্ষ।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বুধবার থেকে দেশে সকল শিল্প কারখানা চালু হবে এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন সৃষ্টি না হয়। এরপরও যদি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সম্প্রতি দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষিতে শ্রমিক পক্ষ এবং মালিক পক্ষের যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ আলোচনার পর একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছি। এই সমঝোতা স্মারকে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ সবাই স্বাক্ষর করেছে। সবাইকে এইটা মেনে চলতে হবে আজকে সকলকে এই অঙ্গীকার করতে হবে। এই চুক্তি থেকে আমাদের পিছু হটার কোনো কারণ বা অবকাশ নেই। কোনো বাহানা করা যাবে না। বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা মাধ্যমে এই শিল্পটিকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে শুধু দেশ থেকে নয় বিদেশ থেকেও হচ্ছে। এই শিল্প যদি বাইরে চলে যায় তাহলে আমাদের কি হবে। সে বিষয়টা সবাইকে চিন্তা করতে হবে।

পরিশেষে আমি একটাই কথা বলবো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই আপনারা নিজেদের হাতে নেবেন না। আর আমি বুধবার থেকে আশা করবো কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন ইন্ডাস্ট্রি এলাকায় সৃষ্টি না হয়। এটার ব্যত্যয় ঘটলে আপনারাই এর জন্য দায়ী থাকবেন। কারণ আপনারা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন।ই

মন্তব্য করুন