খবর ডেস্ক :
৭ জানুয়ারি একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এবারের নির্বাচন নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু কিছু আঁতেল নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ভোট হতে দেবে না, ভোটকেন্দ্রে যেতে দেবে না, এমন হুমকির মধ্যেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। গতকাল সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা অংশ নেন।
এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি। এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।
নির্বাচনে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। এখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলিতা দরকার। ভোট হতে দেবে না, ভোটার যেতে দেবে না এমন হুমকির পরও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা পেয়েছে মাত্র ৩০ আসন। এর পর থেকে তারা দেশজুড়ে সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস চালায়। নির্বাচন করবে না সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু এ দেশের মানুষ নির্বাচন গ্রহণ করেছে। অথচ কিছু আঁতেল ভোট নিয়ে ধুম্রজাল তৈরির চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি অন্যভাবে কিছু করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সরকারের শুভফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চায় নতুন সরকার। এ সময় অবৈধ মজুতদারদের হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী। কারসাজি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধিকারীদের খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা, তা বাড়ল কেন? কেউ অবৈধ মজুদ করলে সাজা পেতে হবে। অসাধু চক্রকে খুঁজে বের করা হবে। অস্বাভাবিকভাবে দুরভিসন্ধিমূলক কোনো মজুত পাওয়া গেলে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট চালিয়ে ওদেরকে জেলে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অস্বাভাবিকভাবে ও দুরভিসন্ধি করে যারা পণ্য মজুত করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেশে আর কখনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। বাজার নিয়ে কেউ যেন কোনো খেলা খেলতে না পারে, সে জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন, নির্বাচন কীভাবে করব সেটা নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। দেশের একটা গোষ্ঠী অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। কিন্তু এই বাংলাদেশে আর কোনোদিন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে দেওয়া হবে না। অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একনেক পুনর্গঠন
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিটির চেয়ারপারসন এবং অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিকল্প চেয়ারপারসন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
১৫ সদস্যের কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, সকল বিনিয়োগ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বিবেচনা ও অনুমোদন, সরকারি খাতে ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে মোট বিনিয়োগ ব্যয় সংবলিত প্রকল্পগুলোর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার সুপারিশ বিবেচনা ও অনুমোদন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা, বেসরকারি উদ্যোগ, যৌথ উদ্যোগ অথবা অংশগ্রহণমূলক বিনিয়োগ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিবেচনা, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবীক্ষণ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারণী বিষয়সমূহ পর্যালোচনা এবং বৈদেশিক সহায়তার বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনা ও অনুমোদন এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি পর্যালোচনা।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কমিটির বৈঠক প্রয়োজন অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে। পরিকল্পনা বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। গত ১১ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন সরকার গঠন করা হয়। এ সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।