১ দিনে ১৭ জনের মৃত্যু, নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত, টানা বৃষ্টির আভাস

বিপদের নাম এখন বজ্র

খবর ডেস্ক : বজ্রপাতে গতকাল কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও শরীয়তপুরে ১৭ জন মারা গেছেন। এদিকে, গতকাল আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে, দেশের ৯টি অঞ্চল- রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরে তোলা হয়েছে ১ নম্বর সতর্কসংকেত। বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রতিনিধিদের পাঠানো ও প্রকাশিত সূত্রের খবর-

কুমিল্লা : কুমিল্লায় বজ্রপাতে কৃষি জমিতে তিনজন ও খেলার মাঠে দুজন শিক্ষার্থীসহ মোট ৫জন নিহত হয়েছেন।
কুমিল্লার বরুড়া, মুরাদনগর ও দেবিদ্বার উপজেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগচ্ছ গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত উভয়েই বড়হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

নিহত কিশোর ২জন হচ্ছে পয়ালগচ্ছ গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং আবদুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)। অপরদিকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে দুজন কৃষক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৩জন। এ ঘটনার পর থেকে আহতরা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন- কোরবানপুর গ্রামের বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও আন্দিকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া। মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধৈইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দেবিদ্বার উপজেলার সাহারপাড়ায় বাবার সঙ্গে কৃষিজমি থেকে ধান আনতে গিয়ে মীম আক্তার (১০) নামে ১ স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। মীম সাহারপাড়া গ্রামের ইমন মিয়ার মেয়ে। সে সূর্যপুর কোটকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের হাওরে বজ্রপাতে এক নারীসহ ৩জন নিহত হয়েছেন। অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার পৃথক তিনটি হাওরে এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্র দাসের ছেলে ইন্দ্রজিত দাস (৩০) ও খয়েরপুর-আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১৪)। এ ছাড়া মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের মৃত আশ্রাফ আলীর স্ত্রী ফুলেছা বেগম (৬০)।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনার ২ উপজেলায় পৃথকভাবে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে বজ্রপাতে শিশুসহ ২জন নিহত হয়েছেন। মদনে সকাল ৭টার দিকে আরাফাত মিয়া (১০) নামের শিশু নিহত হয়। এর আগে গত রবিবার রাত ১০টার দিকে জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের খারনৈ ধুনন্দ মধ্যপাড়া গ্রামে দিদারুল হক নামের এক মাদরাসা শিক্ষক নিহত হয়েছেন।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হাওরে বজ্রপাতে দূর্বাসা দাস (৩৫) নামে এক ধান কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৩জন। সকালে এ ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তি উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালাবাসী দাসের ছেলে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে বিশাখা সরকার (৩৫) নামে এক কিষানির মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের রাধাগোবিন্দ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিশাখা সরকার উত্তর কচুয়া ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের হরিপদের স্ত্রী।

মৌলভীবাজার : বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা-শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা-বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বাঞ্ছারামপুরে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে এক কৃষক মারা গেছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও একজন। দুপুরে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চর মরিচাকান্দি বিলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত মানিক মিয়া (৬০) চর মরিচাকান্দি বিলপাড়ার বাসিন্দা। আহত হয়েছেন হানিফ মিয়া (৬৫)।

শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরে বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে সখিপুর ইউনিয়নের বেপারী কান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি সখিপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেপারী কান্দি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ছোরহাব বেপারীর স্ত্রী।

শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টির আভাস : তাপপ্রবাহের মধ্যেই ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরের দিকে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, মহাখালী, আগারগাঁও, সংসদ ভবন এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি ঝরেছে। স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মহানগরবাসী। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, আগামী ৩-৪ দিন এমন বৃষ্টি থাকবে, এরপর বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে তাপমাত্রা বাড়বে। কমবেশি সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকায় খুব একটা হবে না, এমনই থাকবে।বা:প্র।

মন্তব্য করুন