ডেস্ক: হাসিনার রেখে যাওয়া প্রশাসনই এখন সরকারের সব চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, এখন এত জামাত, এত বিএনপি যদি সচিবালয় থাকে তো হাসিনার সময়ে এরা থাকলো কেমনে? ও (শেখ হাসিনার সরকার) তো প্রায়ই পোস্টমোর্টাম করতো, পোস্টমর্টাম করে করে বের করে বের করে দিতো তাই না। গয়েশ্বর রায় বলেন, হাসিনা সরকার ছিলো ফ্যাসিবাদ, ভুইলা গেছে তো ফ্যাসিবাদ সরকার। এই সরকারটা কোন বাদ। সরকারের কোন কাজকর্ম আছে চোখে পড়ে, তিন চারজন ছাড়া আর কেউ কোন কথা বলে? মন্ত্রণালয় কেমনে চলে, কোন মন্ত্রণালয় কি হচ্ছে কোন খবর রাখে। সরকারের সব চালাচ্ছে শেখ হাসিনা রেখে যাওয়া সেই প্রশাসন।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে হিউম্যান রিসার্চ এ্যান্ড এনালাইসিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘জুলাই বিপ্লব ও আগামীর গণতন্ত্র ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রশ্ন রেখে বলেন, আজকে যে এলাকায় সব বিএনপি তাহলে আওয়ামী লীগ এতদিন ছিল কোথায়? কতগুলো মাধ্যমে দেখবেন টিক-টক হাবিজাবির মধ্যে দেখবেন। আর মিডিয়া এমন স্বাধীন হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মধ্যে কিন্তু দায়িত্বমূলত একটা থাকবে। মিডিয়া স্বাধীনতা যা খুশি তাই বলব, যাকে খুশি তাকে বলব। যেমন আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিবো। আর সোশ্যাল মিডিয়া এমন হইছে যে, আমার কথা আমি বলব, যাকে খুশি তাকে বলব, যা খুশি তাই বলব। এগুলো শুনলে কান গরম হয়ে যায় এবং মানুষের মাথা নষ্ট করে দেবে, ছোট ছোট শিশু বাচ্চাদেরকে নানা ধরনের যে উপসর্গগুলি তৈরি করতেছে, একেবারে আমি অনেকগুলো কথা বলতে উচ্চারণ করতে পারব না এখানে মা-বোনেরা আছেন সেটা এখানে পাবেন। এই স্বাধীনতা আমরা কোথায় দেবো ? বেহেস্তে না দোজখে দেব?
ফ্যাসিবাদ বিদায় হলেও দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি উত্থান হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনারা যাদেরকে মৌলবাদী বলেন, আমি তাদের মৌলবাদী বলি। তারা এখন বেহেশতের টিকিট বিক্রি করতেছে। অর্থাৎ তাগো লগে থাকলে আপনি বেহেশতে যাবেন, আর তাগো লগে না থাকলে আপনি দোজখে যাইবেন। আর নিজেরা বেহেশতে যাইব কিনা সেই কথা তারা জানে না। সেজন্য আমি বলব, দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হচ্ছে। আমরা ফ্যাসিবাদের থেকে মুক্তি পাইছি। কিন্তু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে আমরা এখন সাম্প্রদায়িকতা উগ্র উন্মাদনা সৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে যেটার মধ্য দিয়ে মব তৈরি হয়।
গয়েশ্বর বলেন, আমরা যদি গণতন্ত্রের পথে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে না রাখতে পারি তাহলে সাম্প্রদায়িকতা হবে ফ্যাসিবাদের চেয়ে দ্বিগুণ কঠিন এবং জনজীবন ধ্বংসের শেষ মাথায় নিয়ে যাবে। এই আধুনিক বিশ্বে মুক্ত চিন্তা, প্রতিভার বিকাশ এরা হতে দেবেন না, ওরা করতে দেবেন না।
বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধ বিশ্বাস করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা ধর্ম যে যেই বিশ্বাসই করুক না কেন ধর্ম কিন্তু মানুষকে সঠিক পরিচালিত করার জন্য একটা জীবন ব্যবস্থা। ধর্মে যেটা পাপ আধুনিক রাষ্ট্র আইনে সেটা হলো অন্যায়। সেই অন্যায়ের বিচারের ধারার মধ্যে লেখা থাকে কোন অন্যায়ের জন্য কতটুক শাস্তি। ঠিক আপনি পবিত্র কোরআন-গীতা পড়েন কোন পাপের জন্য মৃত্যুর পরে কার কি শাস্তি হবে সেটাও কিন্তু লেখা আছে। সেই কারণে ধর্মে সাথে রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোনো সাংঘর্ষিক ব্যাপার নেই।
পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গণতন্ত্র মানে হলো জনগণ ভুলবশত হোক আর সঠিকভাবেই হোক তার ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে। আবার জনগণ যদি মনে করে যে, এরে ভোট দেয়া ভুল করছি তাহলে আরেকবার ভোটের সময় ভোট দিবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। এই সোজা পথটায় আমাদের চলতে কষ্টটা কেনো? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো সংস্কার গান গাইতে গাইতে অনেক কুসংস্কারে পরিণত করে ফেলেছে। ওই যে বললাম, হায়ার করে বিদেশ থেকে বুদ্ধিমান লোক আনা হইছে আর এত বুদ্ধিমান একখানে বসলে যা হয় তাই হইতেছে। বদিউল আলম মজুমদার একটা বিরাট লেখা লেখছেন পিআর এর বিরুদ্ধে। ভাই, আমি তো এত লেখাপড়া জানিনা, আমি পিআর বুঝিও না। এই পিআরটা কোথায় থেকে আসতেছে বুঝি না। এখন বুঝতেছি-শুনতেছি যে নেপালে আছে। এজন্য সকাল-বিকাল প্রধানমন্ত্রী পাল্টায়। পাকিস্তানে সিএসপির (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) ভাইভা পরীক্ষায় একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলো যে, পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রীর নাম কি? পরীক্ষার্থী বললেন, সরি স্যার আমি তো সকালবেলা পত্রিকাটা পড়িনি। কালকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জানি অমুক, এর মধ্যে যদি পরিবর্তন না হয়ে থাকে। এই পিআরের ব্যবস্থাটা এরকম যে, সকালে প্রধানমন্ত্রী একজন, দুপুরে আরেকজন, রাত্রেবেলা আরেকজন, এই পদ্ধতি।
সবাই এমপি হতে চাই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ছোট ছোট দলে মিটিং করি কেন? আমরা গণতন্ত্র চাই নিরঙ্কুশভাবে। আমাদের নেতা তারেক প্রথমে বলছেন, আপনার ভোট আপনিই দিবেন, আমাকে নাইবা দেন। আপনাদের ভোটের অধিকারের আন্দোলন করছি আমার পাশে থাকেন। কিন্তু আমরা যারা বিএনপি করি সবাই কি তারেক রহমানের মতো বলি নাকি। আমরা তো সবাই এমপি হইতে চাই, তোরা যে যা বলিস ভাই। আমরা কিন্তু এলাকার মধ্যে নিজেরা নিজেরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কাঁদাছুড়াছুড়ি শুরু করি, আর সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ছাইড়া দেই, কে কারে কী কয়? দোষ তাদের না, তারা আইটেম পায় ছাইড়া দেয়, ভিউয়ার বেশি হলে উপার্জন হয়, আয় হয়। সুতরাং আমরা যদি সংযতশীল না হই, আমরা যদি বলি যে জনগণের জন্য করি, এইটা আমি মনে করি আশীর্বাদ হতে পারে। আমরা পলিটিক্স করি নিজের জন্য, আমি মন্ত্রী হমু, এমপি হমু, এমপি-মন্ত্রী হলে সালাম পামু, আমার বাড়ি হইবো, গাড়ি হইব। আমি আত্মসমালোচনা করছি, আমি কোন দল বলে কথা বলছি না। যদি আমার এটা চিন্তা থাকে যে, পলিটিক্স ইজ এ প্রফেশন অন দ্যা বেসিস, বি দ্যা রিচ ম্যান, তাহলে জনগণ আমাদের দিকে তাকাইয়া কতক্ষণ থাকবে? কেন থাকব? সুতরাং আমরা যদি সমস্বরে নামি যে আমরা গণতন্ত্র চাই, আমরা জনগণের অধিকার চাই আর কিছু চাই না। কারো শক্তি না আপনাকে সরাতে পারে।
সংগঠনের আহ্বায়ক আহমেদ হুসেইনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শহিদুল হক দেওয়ানের আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসি প্রফেসর এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সাবেক ছাত্র নেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।ই