
গণহত্যাসহ নির্বিচারে গুলি করে হত্যার অভিযোগ সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাই আসামি
হাসিনার বিরুদ্ধে সারাদেশে একের পর এক মামলা
নিজস্ব প্রতিনিধি : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
গণহত্যা, পুড়িয়ে মারা, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে গুলি, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ির বহরে হামলাসহ নানা অভিযোগ আনা হচ্ছে এসব মামলায়। মামলায় সাবেক মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও প্রশাসনের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অনেক কর্মকর্তার নামও আসামির তালিকায় থাকছে। তাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে। কেউ কেউ দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন বলে আলোচনা আছে। অন্যদিকে তার নামে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও একটি অভিযোগ এসেছে।
শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনায় হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা : মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে গুলির ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার এক আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল-ফারাবীর আদালতে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী এ মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মতিঝিল থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও সাবেক আইজিপি হাসান মাহাবুব খন্দকার, র্যাবের সাবেক প্রধান এ কে এম শহিদুল হক, এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক জিয়াউল হাসান, মতিঝিল বিভাগের সাবেক ডিসি বিপ্লব কুমার সরদার, মতিঝিল থানার সাবেক ওসি ওমর ফারুক, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মুনসুর আহমেদ, তৎকালীন মতিঝিল থানার ছাত্রলীগ সভাপতি মাহাবুবুল হক হিরন, ইমরান, আওয়ামী লীগ নেত্রী মমতাজ পারভীন, মতিঝিল থানার সাবেক ওসি ফরমান আলী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সালু, মতিঝিলের সাবেক ডিসি শেখ নাজমুল আলম, হামদাদ গ্রুপের অবসরপ্রাপ্ত ডাইরেক্টর মেজর (অবঃ) ইকবাল, ডিসি মতিঝিল বিভাগের সাবেক ডিসি আশরাফুজ্জামান, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, এমদাদুল হক ও শেখ শাহে আলম তালুকদার।
মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্লগাররা ধর্মীয় অবমাননা ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি এবং আপত্তিকর লেখালেখি করার প্রতিবাদে হেফাজত ইসলাম ১৩ দফা দাবি সরকারের কাছে দেয়। সরকার দাবি না মানায় ২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে রাস্তায় অবস্থান নেয় তারা। ওইদিন রাত ১১টা থেকে পরের দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত রাস্তা ও বিদ্যুৎলাইন বন্ধ করে হাসিনার মদদে আসামিদের যোগসাজশে অন্য আসামিরা এজাহারে বর্ণিত পুলিশ ও আর্মি সদস্যরা মিলে নিরীহ মাদরাসাছাত্র ও পথচারীদের ওপর গণহত্যা চালায়। তাদের হত্যা করে লাশগুলো সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে গুম করে। এ সময় বহু মাদরাসাছাত্র হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তাদের অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা ও জিডি করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা নেয়নি। একজন রাজনীতিবিদ তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষকে নির্বিচার গণহত্যার কারণে আদালতে অভিযোগটি এনেছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় হাসিনাসহ ১১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : ২০১৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপির তেজগাঁও থানায় এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ মোট ১১৩ জনকে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিললে মামলা হিসেবে তা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও থানার ওসির চার্জে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) সরোয়ার আলম খান।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ওই সময় তার গাড়ি বহরে হামলা হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও ফকিরাপুলে। ওইসব হামলায়ও সরকার দলীয়রা সম্পৃক্ত বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ওই ঘটনায় ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে।
জয়পুরহাটে শেখ হাসিনাসহ ১২৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জয়পুরহাটে কলেজ শিক্ষার্থী নজিবুল সরকার বিশাল (১৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল নিহত নজিবুলের বাবা মজিদুল সরকার বাদী হয়ে আদালতে অভিযোগ করার পর জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর কোর্টের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মোমেন ফকির বলেন, শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও জয়পুরহাটের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ১২৮ জনের নামে মামলাটি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে জয়পুরহাটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নজিবুল নিহত হন। তিনি পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের মজিদুল সরকারের ছেলে। নজিবুল পাঁচবিবি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার ১৪ দিন পর রোববার নজিবুলের বাবা বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন।
রাজধানীর সূত্রাপুরে শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুই ছাত্র হত্যা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর সূত্রাপুরে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে এ আবেদন করেন নাসরিন বেগম নামে এক নারী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সূত্রাপুর থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলায় যাদের আসামি করা করা হয়েছে- সাবেক সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের অজ্ঞাতনামা নেতৃবৃন্দ এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যসহ আরও ২০০ থেকে ২৫০ জন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। গত ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা আন্দোলন নিয়ে বিরূপ ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে ওবায়দুল কাদের, তাপস, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাছান মাহমুদ, মহিবুল হাসান, পলক, নুরুল ইসলাম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন। ছাত্রদের দমনে এসব আসামিদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের প্রত্যক্ষ মদদে ও নির্দেশে নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার ও হাবিবুর রহমান আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও পিওএম থেকে নিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা গত ১৫ জুলাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন, গুম, খুন করা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা সূত্রাপুর থানাধীন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। তাদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিও চালানো হয়। এতে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ওমর ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
শেখ হাসিনা ও তার চার মন্ত্রীসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা
রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রংপুর নগরীর রাজা রামমোহন মার্কেটের সামনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা এবং পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির নিহতের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। রোববার রংপুরের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজু আহামেদের আদালতে মামলাটি করা হয়।
ঢাকা গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইনস্টিটিউটের অষ্টম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন নিহত শিক্ষার্থী তাহিরের বাবা আব্দুর রহমান। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানাকে নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, এডিসি (ক্রাইম) উৎপল কুমার রায়, এডিসি (ডিবি) নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসি মোন্তাসির বিল্লাহ, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম ছাদায়েত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রমানিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাফিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নাসিমা জামান ববি।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত হোসেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কানা হারুন, সাবেক কাউন্সিলর ইদ্রিস আলী, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, সভাপতি জেলা যুবলীগ লক্ষণ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক জেলা যুবলীগ মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, যুবলীগ নেতা ডিজেল আহামেদ, নাসিম আহামেদ ছুনু, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শাহাজানুর ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক রিপন বাবু, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাব্বির আহামেদ, সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান চপল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মামুনসহ অজ্ঞাত ২০/৩০জন।
নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনা-শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে আবুল হাসান (২০) নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে নিহত আবুল হাসানের বড় ভাই আবুল বাশার বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ওই হত্যা মামলাটি করেন। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুস সাত্তার মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত আবুল হাসান কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, সাবেক জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, তার ভাতিজা আজমেরী ওসমান, অয়ন ওসমান, শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল করিমসহ এজাহারনামীয় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড় থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলাটি করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট বেলা দেড়টার দিকে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় মামলার বাদীর ভাই আবুল হাসানকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অপরাপর আসামির নির্দেশে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান তাকে গুলি করে হত্যা করেন।
স্কুলশিক্ষার্থী ইয়াসিন হত্যায় নাটোরে ১১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নাটোরে স্কুলশিক্ষার্থী ইয়াসিন ইসলামকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নাটোরের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ১১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার রোববার নিহত ইয়াসিনের বাবা ফজের আলী নাটোর সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। নাটোর সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে ফজের আলী অভিযোগ করেন, তার ছেলে ইয়াসিন ইসলাম নাটোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। ৪ আগস্ট সকালে ইয়াসিন শহরের মাদরাসা মোড়ে আন্দোলন করার সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুকুমে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ অন্য আসামিরা তার ছেলেকে মারধর করেন। পরে তারা কান্দিভিটার শিমুলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে তাকে নিয়ে আটকে রাখে। পরদিন শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর পাওয়ার পর ইয়াসিন ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে আটকে রেখে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিজ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যান শফিকুল ইসলাম শিমুল। পরদিন সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে ইয়াসিনের পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওসি মিজানুর রহমান বলেন, এজাহার পাওয়ার পর মামলাটি নথিভুক্ত করা হচ্ছে। এজাহারে উল্লেখ করা অপর আসামিরা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাটোর কোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, সহ-সভাপতি ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, প্যানেল মেয়র আরিফুল ইসলাম মাসুম, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোর্তজা আলী বাবলু, নাটোর কোর্টের জিপি আব্দুল মালেক শেখ, নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল, জেলা যুবলীগ সভাপতি এহিয়া চৌধুরী প্রমুখ।ই