হজের খুতবায় মুসলমানদের ঐক্য ও তাকওয়ার বার্তা

খবর ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে লাখো মুসলমান যখন ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ পালন করছেন, তখন ঐতিহাসিক মসজিদে নামিরায় হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহর প্রতি তুলে ধরা হলো গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। মসজিদুল হারামের ইমাম ও সউদী আরবের বিশিষ্ট আলেম শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ এ খুতবায় মুসলমানদের প্রতি ঐক্য, সংহতি, তাকওয়া এবং আল্লাহর ভয় প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

৫ জুন, বৃহস্পতিবার (৮ জিলহজ, ৫ জুন) হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—আরাফার দিনে, এই খুতবা প্রদান করা হয়। ইসলামী পরম্পরা অনুসারে, আরাফার খুতবা মুসলিম জগতের জন্য বার্ষিক ধর্মীয় ও নৈতিক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতি বছর হজের এই দিনটিতে দেওয়া খুতবা বিশ্বজুড়ে সম্প্রচারিত হয় এবং মুসলমানদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এবারের খুতবায় গুরুত্ব পায় ঐক্য, ক্ষমাশীলতা, নেক কাজ, তাকওয়া ও ইহসানের শিক্ষা।

মসজিদে নামিরায় দেওয়া খুতবায় শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ বলেন, মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ঈমানদারদের উচিত তাকওয়া অবলম্বন করা, কেননা তাকওয়াই ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু, তাই তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা আবশ্যক।

তিনি উল্লেখ করেন, ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহর মনোনীত জীবনব্যবস্থা। খুতবায় তিনি ক্ষমার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “যদি তুমি তোমার শত্রুকে ক্ষমা করো, আল্লাহ তোমাকে তাঁর বন্ধু বানিয়ে নেবেন।

শায়খ হুমাইদ আরও বলেন, সৎকর্ম পাপসমূহকে মুছে দেয়। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, “আল্লাহর এবাদত এমনভাবে করো যেন তুমি তাঁকে দেখছ।” তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের তিনটি স্তর রয়েছে—ইসলাম, ঈমান ও ইহসান—যার মধ্যে ইহসান সর্বোচ্চ স্তর। খুতবায় তিনি পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, নম্রতা, ও লজ্জাশীলতাকে ঈমানের অঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করেন।

আরাফায় অবস্থানরত হাজিদের উদ্দেশে শায়খ বলেন, এই সময়টা আল্লাহর জিকির ও দোয়ায় ব্যয় করা উচিত। তিনি বলেন, “নেক কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো, আর মন্দ কাজে বাধা দাও”—এটাই ইসলামের শিক্ষা।

এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার হাজি আরাফার ময়দানে পৌঁছাতে শুরু করেন। অনেকে জাবালে রহমতের পাদদেশে অবস্থান নেন—যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সূর্যাস্তের পর হাজিরা আরাফা থেকে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন, যেখানে তারা ইবাদত করবেন এবং শয়তানকে প্রতীকি পাথর নিক্ষেপের জন্য কঙ্কর সংগ্রহ করবেন।

১০ জিলহজ সকালে বড় শয়তানকে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করে হাজিরা পশু কোরবানি করবেন এবং ইহরাম মুক্ত হবেন। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ দিনে তিনটি শয়তানকে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করা হবে। এরপর কাবা শরিফে ‘তাওয়াফে জিয়ারত’ এবং সাফা-মারওয়া সাঈ সম্পন্ন করবেন হাজিরা।

১৩ জিলহজে শেষ রমি সম্পন্ন করে হাজিরা মিনা ত্যাগ করে নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরবেন। সউদী কর্তৃপক্ষ হাজিদের অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা পেতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে বাইরে না থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

হজের খুতবায় বার বার উঠে এসেছে মুসলিম সমাজের ঐক্য, তাকওয়া ও নেক আমলের প্রয়োজনীয়তা। শায়খ সালেহ বিন হুমাইদের এই খুতবা শুধু হাজিদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি বার্ষিক নৈতিক দিকনির্দেশনা। মুসলমানদের উচিত এই শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করা এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি, সহনশীলতা ও আল্লাহভীতি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা।ই

মন্তব্য করুন