গাইবান্ধায় জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান
নিজস্ব প্রতিনিধি : জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচন সংস্কার কমিটি হয়েছে। তারা কাজ করছেন। আমরা দেখতে চাই, তারা আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। সংস্কার কাজে জামায়াত সহযোগিতা করবে। সংস্কারের জন্য আমরা ধৈর্য ধরবো।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, জামায়াত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটা আসনে প্রার্থী দিবে; তা নির্বাচন সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি এসময় আরও জানান, সময় বলে দিবে আগামী নির্বাচনে জামায়াত একক না জোটগতভাবে অংশ গ্রহণ করবে।
জামায়াতে ইসলামী জেলা শাখার আমীর মো. আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, গত ১৫ বছরে অসংখ্য মায়ের বুক খালি করা হয়েছে। আয়না ঘরে বন্দী রেখে জঙ্গিবাদের নাটক করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের নামে বিনা ভোটে এমপিদের পাশ করানো হয়েছে, ২০১৮ সালে নিশি রাতে ভোট হয়েছে এবং ২০২৪ সালে আমি আর ডামি প্রার্থীর নির্বাচন হয়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের দেশ প্রেমিক বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করে সীমান্ত চৌকিদার- বিজিবি করেছে।
জামায়াত আমির বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে সাম্যের, বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন। সকল ক্ষেত্র থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন করা হবে না। যেখানে সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘুর ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকবে না। সব মানুষই দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচিত হবে। সকলেই শান্তিতে সহাবস্থান করবে।
গাইবান্ধাবাসীর উদ্দেশ্যে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, ক্ষমতায় গেলে আমরা বৈষ্যমহীন, সাম্যের, মানবিক ও অহংকার করার মতো একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। যেখানে কোন চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সন্ত্রাসী এবং ঘুষ-দুর্নীতি থাকবে না।
এ সময় তিনি স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘুর ওপর সকল নির্যাতন অত্যাচার, বাড়িঘর লুটপাট ও সম্পত্তি দখল ঘটনার একটি গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান। এ কাজে জামায়াতে ইসলামী সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যদি জামায়াতের কোন নেতাকর্মীরা জড়িত থাকে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
জামায়াতের আমির শফিকুর আরও বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কেউ নারীদের ইজ্জতকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। তাদের পূর্ণ মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। কর্মক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বর্তমান সরকারের কাছে গাইবান্ধায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দাবি জানান ।
কর্মী সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ডা. আব্দুর রহীম সরকার, সিনিয়র নায়েবে আমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়ারেছ সরকার, জেলা সেক্রেটারি জহুরুল হক সরকার, সহকারী সেক্রেটারি সৈয়দ রোকনুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশবাড়ীর পুরোহিত মিলন ভট্টাচার্য প্রমুখ।
দেড়যুগ পর গাইবান্ধা জেলায় জামায়াতের এই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনটি কর্মী সম্মেলন হলেও তা পরিণত হয় জনসমাবেশে। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যানার, ফেসটুন, প্লেকার্ডসহ মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে যোগ দেয়। এ সময় ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ কানায়-কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় পাশের জেলা স্কুল মাঠ ও আশপাশের বিভিন্ন সড়কে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়।ই