সালমান শাহ হত্যা মামলা, স্ত্রী সামিরাসহ নতুন করে আসামি হলেন যারা

অনলাইন ডেস্ক : চিত্রনায়ক সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ মোট ১১ জনকে। সোমবার (২১ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার আদালতের নির্দেশে সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়ার পর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই এই মামলা দায়ের করেন শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুম।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মাজহারুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এজাহার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মামলার এজাহারে আসামিরা হলেন সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক। এ ছাড়া আসামির তালিকায় আছেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডনসহ আরো কয়েকজন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে বিস্মিত করে না ফেরার দেশে চলে যান নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর এত বছর পরও দর্শক হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন ঢালিউডের হার্টথ্রব নায়ক সালমান শাহ।

এর আগে, অভিনেতা সালমান শাহ হত্যা মামলা পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তার মা নীলা চৌধুরীর রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে এই হত্যা মামলা চলবে বলে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দিয়েছেন।

চূড়ান্ত শুনানিতে উল্লেখ করা হয়, সালমান শাহর মৃত্যুর দিন অভিনেতার মরদেহে বুকের বাম পাশে কালো দাগ ছিল এবং মল ও বীর্যও বের হয়েছিল।

শুনানিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘরে সিরিঞ্জ এবং স্ত্রীর ব্যাগে ক্লোরোফরম ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, অভিনেতার স্বজনদের অভিযোগ পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ থাকলেও সিবিআইয়ের তদন্তে দেওয়া তথ্যে রয়েছে বড়সড় গড়মিল।

অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে সালমান শাহর অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

এরআগে, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছরে মারা যান সালমান শাহ। অভিনেতার হঠাৎ মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেন তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। তবে সেটি মেনে না নিয়ে অভিনেতার পরিবার আদালতে অভিযোগ করে আত্মহত্যা নয়, সুপরিকল্পিতভাবে সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সালমান শাহর প্রকৃত নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। ক্যারিয়ারের শুরুতে ছোটপর্দায় ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করে নিমিষেই খসে পড়েন চলচ্চিত্রের আকাশ থেকে।

১৯৯৩ সালে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায়। প্রয়াত নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত সিনেমাটি দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্কার করল এক নবাগত নায়কের অসাধারণ অভিনয়শৈলী। এমনি করে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা প্রেক্ষাগৃহ মুখী হলেন, পরিচালকরা হলেন আস্বস্ত। এমনি করে সুদিন ফিরে আসে বাংলার চলচ্চিত্রে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অচেনা অজানা সালমানকে। বাংলা চলচ্চিত্রের ত্রাতা হয়ে একে একে উপহার দিলেন দুর্দান্ত ২৭টি সিনেমা। অভিনয়ের জাদু দেখালেন, সবার মন জয় করলেন আবার কাউকে কিছু না-বলে একবুক চাপা অভিমান নিয়ে চলেও গেলেন।

সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘দেন মোহর’ ও ‘তোমাকে চাই’। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় ‘বিক্ষোভ’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ এবং ‘বিচার হবে’। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় ‘জীবন সংসার’, ‘মহামিলন’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ও ‘এই ঘর এই সংসার’ প্রভৃতি।ই

মন্তব্য করুন