
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে নিজে (পদত্যাগ) করে চলে যাওয়ার ঘোষণা
অনলাইন ডেস্ক : কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ থাইল্যান্ড গিয়েছেন। গত বুধবার রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন তিনি। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ অভিযোগ করছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের বঙ্গভবনের অফিস থেকে ফোন কল পেয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদকে এয়াপোর্টে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, চলতি মাসেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও হাইকমিশন বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি ও সামরিক পর্যায়ে অন্তত ২৩টি মিটিং করেছে। এসব কিসের ইংগিত? সোশ্যাল মিডিয়ায় আবদুল হামিদকে কেন বিদেশ যেতে দেয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে ‘নিজে চলে যাবো (পদত্যাগ)’ করবো। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তিনি চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গিয়েছেন। এ সময় তার সঙ্গে তার এক ছেলে ও শ্যালক ছিলেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ২১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। তার মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নেন।
হাসিনা পালানোর পর কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার ওপর হামলার অভিযোগে গত ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ওবায়দুল কাদেরকেও আসামি করা হয়।
মামলার আসামীকে দেশত্যাগে সুযোগ করে দেয়ায় বিতর্কের সুত্রপাত। প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের অফিস থেকে ফোন কল পেয়ে সাবেক আব্দুল হামিদকে এয়াপোর্টে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আব্দুল হামিদকে বিমানবন্দরে আটকানো হলো, তারপর নাকি চুপ্পুর (প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন) অফিস থেকে ফোন কল পেয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এরপরও কি ইন্টেরিমকে জুলাই বিপ্লবীরা সাপোর্ট করে যাবে? ‘সরি, হয় চুপ্পুকে সরান-লীগকে ব্যান করেন, আর না হয় নিজেরা সরে যান।
একই ইস্যুতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন এনসিপির আরেক নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি লিখেছেন, ‘শুধু এই মাসেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও হাইকমিশন বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি ও সামরিক পর্যায়ে অন্তত তেইশটা মিটিং করেছে। লিখে রাখেন আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারের নামে কালেক্ষপণ করা হচ্ছে। একটা পর্যায় গিয়ে বলা হবে এক সময়ের জনসমর্থিত রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা আমাদের কাজ নয়।
এদিকে গতকাল দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাবেক প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটের সামনে বসে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। সব আসামিদের ঘটনার পরে ধরা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঘটনার আগেও ধরা হচ্ছে, পরেও ধরা হচ্ছে। আমি তো অস্বীকার করিনি। ঘটনার আগেও ধরা হচ্ছে, ঘটনার দুই দিন পরেও ধরা হচ্ছে। আমি এটা এখানে আসার পর জানতে পারছি। আমি সঙ্গে সঙ্গেই এটা নিয়ে কথা বলেছি। তিনি বলেন, ‘যারা আব্দুল হামিদকে যেতে দেয়ার ঘটনায় জড়িত তাদের শুধু পদত্যাগ না তদন্ত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো। এটা নিয়ে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কোনও অবস্থাতেই এটা ছাড় দেওয়া যাবে না।ই