
নিজস্ব প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় হাই স্কুলের এক প্রধান শিক্ষককে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জনসম্মুখে রশি দিয়ে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের দস্তিদার হাট বাজারে অভিযুক্ত মো. হানিফ তার মুদির দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্রে, মারধরের শিকার শিক্ষকের নাম আবদুর রহমান। তিনি বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বুচির পাড়ার মৃত-শফিকুর রহমানের ছেলে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন—সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শামসু মাস্টারের বাড়ির শামসুল ইসলামের ৫ ছেলে মো. হানিফ (৪৫), মো. হান্নান (৪২), মো. সোহাগ (৪৫), মো. ইকবাল (৩৮), আবু বক্কর (৫৫) ও আবু বক্করের ছেলে মুসলিম উদ্দিন হিরু (২৬)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক আবদুর রহমান পরিবারের সঙ্গে আগে থেকেই আবু বক্করের পরিবারের জায়গা সংক্রান্ত একটি বিরোধ ছিল। সে সময় সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা হয়। আবদুর রহমানের ভাই-বোনরা আবু বক্করের পরিবারকে কিছু জায়গা বিক্রি করেছিল। কিন্তু শিক্ষক আবদুর রহমান তার অংশ বিক্রি করেননি। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ঐদিন শুক্রবার রাতে আবদুর রহমানকে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের দস্তিদার হাট বাজারে অভিযুক্ত মো. হানিফ তার মুদির দোকানে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সকল অভিযুক্তরা মিলে আবদুর রহমানকে হানিফের দোকানের একটি খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধেন। এরপর মারধর করেন।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পরদিন শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবদুর রহমানকে দোকানের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়।
শিক্ষক আবদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, হানিফ, হান্নান, সোহাগ, ইকবাল, বক্কর ও হিরুরা সবাই মিলে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে হিরু ও হানিফ মিলে আমার তলপেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে তারা সবাই মিলে আমাকে জনসম্মুখে দোকানের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে প্রথমে হেনস্তা করেন। এরপর তারা আমাকে চর-থাপ্পরসহ ব্যাপক মারধর করে। এ ঘটনায় হানিফরাসহ তাদের পরিবারের ১০-১২ জন সদস্য এ ঘটনায় জড়িত ছিল। পরে স্থানীয়রা সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করেন।
তিনি আরও জানান, তারা আমার চোখে আঘাত করেছে। বর্তমানে আমার ২টি চোখে আমি ভাল করে দেখছি না। মামলা দায়ের করলে তারা আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মো. হানিফের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় তাদের মতামত দেয়া সম্ভব হয়নি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় শিক্ষক আবদুর রহমান বাদি হয়ে রোববার বিকালে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, গাছের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ১ শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি আমিও ফেসবুকে দেখেছি। ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। থানার ওসিকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জানিয়েছেন, ভিকটিম শিক্ষক থানায় অভিযোগ দিয়েছেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।