নিজস্ব প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছনখোলা গ্রামে কথিত গণপিটুনিতে ২ জামায়াত কর্মী খুনের ঘটনার ৬ দিন পর ৯মার্চ রোববার মামলা হয়েছে। খুনের শিকার আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার সাতকানিয়া থানায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম জানান, গণপিটুনিতে নিহতের শিকার আবু ছালেকের স্ত্রী একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি ৪৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করেছেন। গত ৩ মার্চ রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিম পাড়া এলাকায় আবু ছালেক ও তার সহযোগী নেজাম উদ্দিনকে সালিশের কথা বলে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
মামলার এজাহারে সুরমি আক্তার উল্লেখ করেন, তার স্বামী আবু ছালেক জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় কর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আবু ছালেক এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলেন। মামলায় অভিযুক্তরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত বছরের ৫ আগস্ট এলাকায় আসার পর ছালেক বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিচার শালিসও করতেন। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ছনখোলা এলাকায় আবদুর নূর নামে ১ ব্যক্তির অটোরিকশায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনার বিচারের দায়িত্ব সালেক ও নেজামকে দেয়া হলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি তারা ১টি সালিশ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেন এবং ৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু ওই বিচারে রিকশার মালিক নুর সন্তুষ্ট না হওয়ায় ৩ মার্চ রাতে ছনখোলায় ফের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। মামলায় তিনি আরো উল্লেখ করেন, এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মামলার ৫ নম্বর আসামি নজরুল ইসলাম মানিকের পরিকল্পনায় হারুন, মমতাজ, কামরুল, আজিজুল ও মাহমুদুল হক অটোরিকশা পোড়ানোর অভিযুক্তদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে দেওয়ার কথা বলে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। এ প্রেক্ষিতে ছালেক ও নেজাম তাদের আর কিছু সহযোগীসহ ১১ জন অটোরিকশা নিয়ে ঘটনার দিন ছনখোলা যান।
পরে সেখানে গেলে টাকা আদায়ের বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় আসামিরা নেজামকে মারধর শুরু করে। পরে ছালেক তাকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার কথা ঘোষণা দিলে এলাকাবাসী জড়ো হয় এবং পরিকল্পিত ভাবে মারধর করে খুন করা হয়। বাদী বলেন, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর শুরু করে। তারা ২ ভুক্তভোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় পিস্তল দ্বারা এলোপাতাড়ি গুলি করলে স্থানীয় ৫ জন আহত হয়। পরবর্তীতে আসামিরা পিস্তলটি রাস্তার ওপর নেজাম উদ্দিনের লাশের পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। এ সময় গোলাগুলিতে ৫জন গুলিবিদ্ধ হন। খুনের শিকার নেজাম উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে। আর ছালেক একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে।
আসামিরা হলেন- মোহাম্মদ হারুন (৫০), মো. মমতাজ (৪৫), কামরুল ইসলাম (৫৩), আজিজুল হক (৫৫), নজরুল ইসলাম মানিক (৫২), মাহমুদুল হক (৫৫), আবু সামা (২৪), মো. সাজ্জাদ (২৫), মো. মিজান ওরফে পিচ্চি মিজান (৩১), মো. কফিল (৩০), সোহেল আহমদ (৩৮), মো. বেলাল (৩০), মো. হেলাল (৩৪), মো. হামিদ (৪৫), মো. ইছহাক (২৬), মো. মোজাফ্ফর মেম্বার (৪২), ওরফে জুইনা (৩৫), মো. কমরু (৪৫), মো. সিফাত (২০), মো. সালাম (৫০), মো. আলম (৫০), মিজানুর রহমান মারুফ (৪১), রমজান আলী (৬০), হোসাইন কবীর (৫৫), মো. ইউনুছ (৫০), মো. নেজাম (৪), মো. জসিম (৪৮), মো. ফারুক ওরফে কালা ফারুক (৪৮), মো. মোরশেদ (৪০), মো. শহিদুল্লাহ (৩২), সালা উদ্দিন (২০), মো. খোকন (৩৫), মো. এমরান (২৮), মো. খলিল (৪৫), সৌরভ হোসেন মিন্টু (৪৫), মো. মনি (৪৬), মুখলেচুর রহমান জাকের (৫৫), মো. মোর্শেদ (৪৮), মো. ওসমান (৫৫), আবু তাহের (৩৬), শাহজাহান প্রকাশ মীম (৫০), মো. কায়ছার (৩৮), মো. নাছিম (৪০), মো. ফয়সাল (২৪), নজরুল ইসলাম (৫২), মো. জহির (৫০) ও মো. জাকির হোসেন ওরফে কালা জাকির (৫০)।
উক্ত ২ কর্মী নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক ও তার ২ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। বিবৃতিতে নজরুল ইসলাম মানিকের নির্দেশে তার ২ ভাই মমতাজ ও হারুনের পরিকল্পনায় নেজাম ও ছালেককে গণপিটুনির নামে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।ই:প্র।