
অনলাইন ডেস্ক : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, স্বর্ণ চোরাচালানকারী, মাদক ব্যবসায়ী, হত্যাকান্ডে জড়িত ও কুখ্যাত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান চালাচ্ছে।
ঈদকে সামনে রেখে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ গত ২৯ মার্চ শনিবার রাত ১:১৫ ঘটিকার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, নগরীর বানরগাতি আরামবাগ এলাকায় একটি নির্মানাধীন একতলা একটি ভবনে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নগরীতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটানোর জন্য অবস্থান করছে। তৎপ্রেক্ষিতে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ এবং নৌ বাহিনীর সহযোগে উক্ত বাড়িটি ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করে।
সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ভবনের ছাদ থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশ নিজেদের জানমাল রক্ষায় কৌশল অবলম্বন করে এবং একইসাথে প্রতিরোধ করার জন্য সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে শটগানের গুলি ছোড়ে। তখন সন্ত্রাসীরা ছাদ থেকে নেমে বিল্ডিংয়ের নিচে এসে পুনরায় গুলি ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ পাল্টা শটগানের গুলি ছুড়ে। এই গুলাগুলির মধ্যেই পুলিশ দুঃসাহসিকতার সাথে চারিদিক থেকে বিল্ডিংটি ঘিরে ফেলে এবং বিল্ডিংয়ের ভিতর থেকে দেশীয় অস্ত্র ও বিদেশী আগ্নেয়ান্ত্র গোলাবারুদসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশসহ ৫ জনকে আটক করে। তাদের সংগীয় অন্যান্য সন্ত্রাসীরা ঐ বিল্ডিং থেকে পাশের বিল্ডিংয়ে উঠে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদেরকেও আটক করার জন্য ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পুনরায় এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। পাল্টাপাল্টি গুলাগুলির একপর্যায়ে আরও ৫ জন সন্ত্রাসীকে দেশীয় অস্ত্র ও বিদেশী আগ্নেয়ান্ত্র গোলাবারুদসহ আটক করা হয়।
আটককৃত সন্ত্রাসীদের নাম ১. পলাশ শেখ (৩৮) ২. নুরে আলম সিদ্দিকী ওরফে লিয়ন শরীফ (২৯) ৩. রুবেল ইসলাম লাভলু ওরফে কালা লাভলু (৩৫) ৪. ইমরান হোসেন ওরফে ট্যাটু ইমরান (৩৫), ৫. সৈকত রহমান (২৭) ৬. ফজলে রাব্বি রাজন (৩৬) ৭. রিপন (৩০) ৮. গোলাম রব্বানী (২৬), ৯. ইমরানুজ্জামান (৩৩) ১০. শহিদুল (৩৫)।
এ সময় সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত ৭টি বিভিন্ন ধরণের মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
অনুমান ৩ ঘন্টা যাবত বন্দুকযুদ্ধের সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে অনুমান ৮০/৯০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
সন্ত্রাসীদের সাথে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির সময় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে ৭ জন পুলিশ সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।
পুলিশ নিজেদের জানমাল ও সরকারী সম্পদ রক্ষার স্বার্থে এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে শটগানের ৪৭ রাউন্ড গুলি ফায়ার করে।
গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসীদের হেফাজত হতে ৩টি পিস্তল, পিস্তলের ৪ রাউন্ড গুলি, ১টি শটগান, শটগানের ২৩ রাউন্ড গুলি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি চাপাতি, ১টি হাসুয়া, ২টি চাকু, ৪টা মোবাইল ফোন এবং ৭টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
থানার রেকর্ডপত্র যাচাই করে সন্ত্রাসী পলাশের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের ১৪টি, তার মধ্যে ২টি হত্যা, ৩টি ডাকাতি, ১টি অস্ত্র, ২টি চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য ৬টি সহ মোট ১৪টি মামলা পাওয়া যায়।
আসামী রুবেল ইসলাম লাভলু ওরফে কালা লাভলু এর বিরুদ্ধে ১টি ডাকাতি, ১টি অস্ত্র, ১টি চাঁদাবাজি, ১টি পুলিশ এ্যাসাল্ট ও অন্যান্য ৩টি সহ ৬টি মামলা পাওয়া যায়। আসামী নুরে আলম সিদ্দিকী ওরফে লিয়ন শরীফ এর বিরুদ্ধে ২টি, মোঃ ইমরান হোসেন ওরফে ট্যাটু ইমরান এর বিরুদ্ধে ১টি, ফজলে রাব্বি রাজন এর বিরুদ্ধে ১টি, মোঃ রিপন এর বিরুদ্ধে ১টি, মোঃ ইমরানুজ্জামান এর বিরুদ্ধে ১টি মামলা আছে।
উদ্ধারকৃত ৭টি মোটরসাইকেলের মধ্যে ৫টির নাম্বার প্লেট আছে এবং ২টির নাম্বার প্লেট নাই। মোটরসাইকেলগুলোর মালিকানাসহ কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে।
ঘটনার সময় বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে এবং পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় আসামীরা শারীরিকভাবে কিছুটা আহত হওয়ায় তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।ই