রেললাইনে মৃত্যুফাঁদ

♦ ২০২৪-এ ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু ১০১৭টি ♦ ট্রেনের সামনে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব ♦ কানে এয়ার ফোন, মোবাইলে কথা, ট্রেন লাইনে বসে গল্প ও গেম খেলায় মৃত্যু, ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ও টিকটক করতে গিয়ে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিনিধি : রেললাইন পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। কখনো অসচেতনতার কারণে আবার কিছু ক্ষেত্রে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে কাটা পড়ছে মানুষ। গড়ে প্রতি বছর ট্রেনে কাটা পড়ে হাজারের ওপর মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্যে, লাইনে দাঁড়িয়ে কানে এয়ারফোন ব্যবহার, মোবাইলে কথা বলা, ট্রেন লাইনে বসে গল্প করা ও গেম খেলা, অসতর্কভাবে রেলওয়ে ক্রসিং পারাপারের চেষ্টা, ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু এবং আত্মহত্যাসহ কয়েকটি কারণ এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রেলওয়ে পুলিশ ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে সম্প্রতি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ট্রেনের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য প্রস্তাবও দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু শুধু সচেতনতা দিয়ে কমানো যাবে না। সরকারকে আগে রেললাইনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর এ স্থানে ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় মোট ৯৯৮টি মামলা হয়। মোট লাশ উদ্ধার হয় ১ হাজার ১৭ জনের। এর আগের বছর ট্রেনে কাটা পড়ে ১ হাজার ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। কিছু ক্ষেত্রে রেললাইনে দাঁড়িয়ে সেলফি ও ট্রেনের ওপর টিকটক করতে গিয়েও দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হয়।
গত ২৬ এপ্রিল ঢাকার উত্তরা কোটবাড়ি এলাকায় রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে এক দম্পতির মৃত্যু হয়। গত ২ মে রাজধানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে রাজশাহী কলেজের ইশতিয়াক আহমেদ রাফিদ নামে শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। রেললাইনে দাঁড়িয়ে এক ট্রেনের ছবি তোলার সময় উল্টো দিক থেকে আসা আরেক ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত বছর ফরিদপুরে টিকটকের ভিডিও করতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে লাবিব নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়।
রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) মো. গোলাম রউফ খান বাংলাদেশ সাংবাদিকদের বলেন, রেললাইনে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে থাকেন।

অনেক ক্ষেত্রে মার্ডার কেসের আসামিরা ঘটনা অন্যদিকে নিতে ভুক্তভোগীর লাশ রেললাইনে ফেলে যায়। যে স্থানে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং আছে সেখানে আমরা বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করি। কিছু জায়গায় উঠান বৈঠক এবং কমিউনিটি পুলিশের বৈঠক হয়। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়াতে মানুষকে সচেতন হতে হবে। আমরা সম্প্রতি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ট্রেনের সামনে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু শুধু সচেতনতা দিয়ে কমানো যাবে না। সরকারকে আগে রেললাইনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর এ স্থানে ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। লেভেল ক্রসিংগুলোতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অবশ্যই বেষ্টনী থাকতে হবে।বা:প্র।

মন্তব্য করুন