রিসালাত বনাম সাংবাদিকতা: রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গুণাবলি ব্যাখ্যা করার পদ্ধতি

আমাদের নবী (সা.) সৃষ্টিজগতের মধ্যে সবচেয়ে বড় দানশীল ছিলেন (সহীহ বুখারী, ৬)। কিন্তু এ গুণ আমাদের কালিমায় উচ্চারিত হয়নি। তিনি সবচেয়ে বড় মুত্তাকি ছিলেন (সহীহ বুখারী, ৫০৬৩)। কিন্তু এ কথাটিও আমাদের কালিমায় নেই। রাসূল (সা.) আস-সাদিকুল আমীন ছিলেন; কিন্তু এ বৈশিষ্ট্যও আমাদের কালিমাতে উচ্চারিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ক্ষমা, বীরত্ব, সৌন্দর্য, ইলম, উদারতা—সর্বগুণে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটিও আলাদাভাবে আমাদের কালিমায় উচ্চারিত হয়নি। আমাদের কালিমাতে শুধু একটি বৈশিষ্ট্যের কথাই এসেছে, তা হচ্ছে “রাসূলুল্লাহ”। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। কারণ উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যের কোনোটিই ‘বেমিছাল’ নয়। রাসূল (সা.) এর পর্যায়ে না হলেও একটা পর্যায়ে অনেক মানুষের মধ্যেও এ ধরণের গুণাবলি আছে। কিন্তু ‘রাসূলুল্লাহ’ গুণটি বেমিছাল। মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল—এই কথাটির মধ্যে তামাম গুণাবলি পরিপূর্ণতার সাথে সন্নিবেশিত হয়েছে—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

‘রিসালাত’ দুনিয়ার সবচেয়ে ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’ দায়িত্ব এবং এটি বুঝতে হলে এর ব্যাপকতাকে মাথায় রেখে বুঝার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় বুঝা সম্ভব নয়। বহু পশ্চিমা পণ্ডিত এক্ষেত্রে ভুল করেছেন, বহু মুসলিম তাত্ত্বিকও একই ভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। কারণ তারা রিসালাতের ব্যাপকতা এবং extraordinariness মাথায় রাখেননি, বা রাখতে পারেননি।

রিসালাতের নিজস্ব ফ্রেইমওয়ার্ককে আমলে না নিয়ে রাসূল (সা.) এর গুণাবলি ব্যাখ্যা করতে গেলে বহু সমস্যা তৈরি হয়। একটু ব্যাখ্যা করি-

রাসূলুল্লাহ (সা.) সত্যবাদী। কিন্তু এই সততা সাধারণ সততার মতো নয়। আমরা সততা বলতে মনে করি, সত্য কথা বলা। কিন্তু নবী-রাসূলের জন্য সততা এতো সাধারণ নয়; তাঁদের জন্য সততা হচ্ছে আল্লাহর কালাম বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমাদের সততার ওপর খুব বেশি হলে একজনের জীবন নির্ভর করে। মিথ্যা সাক্ষী দিলে কারও জীবন বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু নবী-রাসূলের সততার ওপর তাঁদের পুরো উম্মাতের দুনিয়া ও আখিরাত নির্ভর করে। কতটুকু পার্থক্য!

রাসূল (সা.) দানশীল ছিলেন। কিন্তু হুনাইনের যুদ্ধে গনিমতের একটি টুকরোও তিনি আনসারদেরকে দেননি। গনিমত না দিয়ে রাসূল (সা.) আনসারদের কাছে তাঁর ‘নিজেকেই’ দিয়ে দিয়েছেন (সহীহ বুখারী, ৪৩৩৩)। রিসালাতের মরতাবা যদি কেউ না বুঝে, তাইলে এই দানের মাহাত্ম্য বুঝতে পারবে?

রাসূল (সা.) ক্ষমাশীল ছিলেন। কিন্তু হুদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গের পর আবূ সুফিয়ান মদীনায় এসে ঘুরাঘুরি করলেও রাসূল (সা.) ক্ষমা করেননি। ওদিকে মক্কা বিজয়ের পর তাদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। রিসালাতের ব্যাপকতাকে বাদ দিলে এ দুটি ঘটনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

এরকম আরও বহু উদাহরণ দেওয়া যাবে। মোটকথা হলো, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সমস্ত গুণাবলি তাঁর রিসালাতের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর সুমহান ব্যক্তিসত্তাকেও আল্লাহ তাঁর রিসালাতের জন্য সাজিয়েছেন। তাই উম্মাতের কাছে আল্লাহর সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন বলে তিনি প্রচলিত অর্থে ‘সাংবাদিক’ হয়ে যাননি। সাংবাদিকদের সংবাদ বহন, আর একজন রাসূলের রিসালাতে আসমান-যমিন ফারাক।

দয়া করে রিসালাতের ফ্রেইমওয়ার্কের বাইরে গিয়ে রাসূল (সা.) এর গুণাবলিকে নিজের বাটখারা দিয়ে পরিমাপ করার প্রবণতা বাদ দিন। এটি ভ্রান্তি, এটি বেয়াদবি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে হিফাজত করুন।ই

মন্তব্য করুন