রাজনীতিবিদদের ঝোক কৃষিতে

খবর ডেস্ক :
সিটি করপোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন কৃষিখাত থেকে বছরে আয় করেন দেড় কোটি টাকা। এই খাতে তার স্ত্রীর আয় ৩৫ লাখ টাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। জমা দেওয়া হলফনামায় সুমন এই তথ্য দিয়েছেন।

জিয়াউল হক সুমন ২০১৫ ও ২০২০ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৯ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। ২০২০ সালের হলফনামায় কৃষিখাতের মৎস্য চাষ থেকে ৬ লাখ ও গরুর খামার থেকে এক কোটি টাকা আয় দেখিয়েছিলেন তিনি। তখন তার স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না এই খাতে। ২০১৫ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে কৃষিখাত থেকে সুমনের কোনো আয় ছিল না। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর কৃষিখাতে মনোনিবেশ করেন তিনি।

একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ কৃষিখাত থেকে বছরে আয় করেন ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৭ টাকা। তবে স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষি জমি থাকার তথ্য দেননি তিনি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই খাতে তার কোনো আয় ছিল না। এবারও প্রথম কৃষিজীবী হন তিনি। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিজের নামে ৯১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৪ টাকা মূল্যের জমি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। অন্য হলফনামাগুলোতে কৃষি জমির তথ্য দেননি এমপি লতিফ।

শুধু চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন ও এম এ লতিফ নন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর আয়ের উৎস হিসেবে কৃষিখাত বেচে নেন। রাতারাতি কৃষিজীবী বনে যান। সংসদ সদস্য হওয়ার পর অনেকেরই কৃষিখাতে আয় বেড়ে যায়। বেড়ে যায় কৃষি জমির পরিমাণও। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অনেকেই কৃষিখাতে আয় দেখালেও তাদের নামমাত্র খামার রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী) আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবার কৃষিখাত থেকে আয় দেখিয়েছেন ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা। ৪ লাখ টাকা মূল্যের কৃষি জমি রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ওই সময়ে দাখিল করা হলফনামায় কৃষিখাত থেকে তার কোনো আয় ছিল না। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে তার আয় ছিল ৩৭ লাখ টাকা। আইন পেশা থেকে ছিল প্রায় ৭ লাখ টাকা। অন্যান্য খাত থেকে ৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৬১ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন তিনি।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী কৃষিখাত থেকে আয় করেন বছরে ৫০ হাজার টাকা। পৈত্রিক সূত্রে কৃষি জমি রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করলেও কী পরিমাণ জমি রয়েছে তা উল্লেখ করেননি। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় কৃষিখাতে আয় ছিল না নদভীর।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবার কৃষিখাত থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। রাঙ্গুনিয়ায় পারিবারিকভাবে বড় খামার রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এই খাতে তার কোনো আয় ছিল না। তবে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই খাতে আয় না থাকলেও ৩১০ শতক কৃষি জমি থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী কৃষিখাত থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ২৫ হাজার ১২৫ টাকা। ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৩৪০ টাকা মূল্যের কৃষি জমি রয়েছে তার। নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে ১৯২ দশমিক ৫৩ শতক কৃষি জমি। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৩ টাকা। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই খাতে তার আয় ছিল ২৫ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য ফজলে করিমের রাউজানে বড় খামার রয়েছে বলে জানা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচনী এলাকায় কৃষি উৎপাদনে বড় জোর দিয়েছেন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ১৩৮ শতক কৃষি জমি থাকার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ কৃষিখাত থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৮৩ হাজার টাকা। ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯০৬ টাকা মূল্যের ৩ দশমিক ৭৩ একর কৃষি জমি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় এই তথ্য দিয়েছেন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে এই খাতে আয় ছিল মন্ত্রী জাবেদের। ৩ দশমিক ৭৩ একর জমির রয়েছে তার। ২০১৮ সালে এ খাতে আয় দেখিয়েছেন ৭২ হাজার ৫৬০ টাকা। ২০১৩ সালে ৪৬ হাজার ২৮১ টাকা ও ২০০৮ সালে ছিল ৩২ হাজার ৮২১ টাকা।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের প্রার্থী সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ কৃষি থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা। ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা দামের কৃষি জমি রয়েছে তার। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই খাতে তার আয় ছিল এক লাখ ৫২ হাজার টাকা।

মন্তব্য করুন