
নিজস্ব প্রতিনিধি : রাঙামাটিতে চলছে ভারী বর্ষণ। জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ায় যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আবার উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তাই প্রতিমুহূর্তে আতঙ্কে কাটছে সময়।
ঘুমহীন মানুষের ঠিকানা এখন আশ্রয় কেন্দ্র। কারণ কোথাও পাহাড় ভেঙে পড়ছে, আবার কোথাও নামছে বান। রাঙামাটি-চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
এই চিত্র দেখা যাচ্ছে রাঙামাটি জেলায়।
জেলায় টানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। কখনো ভারি, কখনো মাঝারি, আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি। রাত-দিন মাইকিং করে পাহাড়বাসীকে সচেতন করছে রাঙামাটি জেলা তথ্য অফিস।
মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১০টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। সঙ্গে আছে রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
আজ রবিবার (১ জুন) সকাল থেকে বৃষ্টির তাণ্ডব চলছে। শহরের মানিকছড়ি, ভেদভেদি, শীমুলতলী ও রাঙাপানি এলাকায় ব্যাপক ধস হয়েছে পাহাড়ের। অনেকের বসত ঘর ভেঙে গেছে।
বাধ্য হয়ে মানুষ ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্রে। ইতোমধ্যে রাঙামাটি জেলায় ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৪ দিন ধরে রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি চলছে। সমুদ্রে নিম্নচাপের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ৩ পার্বত্য জেলা—রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। টানা বৃষ্টি ও বজ্রপাতে পাহাড়বাসী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে রাঙামাটি সদর, কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই, নানিয়ারচর, রাজস্থলী, লংগদু ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ব্যাপক পাহাড় ধস হয়েছে।
রাঙামাটি পৌরসভার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় রাজমনি পাড়া, রাঙাপানি, মুসলিম পাড়া, পোস্ট অফিস, নতুন পাড়া, শিমুলতলী, লোকনাথ মন্দির, আনসার ক্যাম্প, পাবলিক হেলথ, আমানতবাগ, ঘাগড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে রাঙামাটির জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে হাজারো পরিবার। ডুবে গেছে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফসলি জমি, দোকান-পাট, বসত ঘর, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
রাঙামাটি পৌর প্রশাসক মো. মোবারক হোসেন বলেন, পৌর এলাকায় পানিবন্দী কোনো পরিবার নেই, তবে পাহাড় ধসের আতঙ্ক রয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে ২৭টি বিশেষ নিরাপত্তা দল গঠন করা হয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত মাঠে কাজ করছে, যাতে পাহাড় ধসে কোনো প্রাণহানি না ঘটে।
জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ জানান, বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পাহাড় ধস হচ্ছে, তাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে মানুষ নিরাপদে রয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। মাইকিং চালানো হচ্ছে যাতে মানুষ ঝুঁকিতে না পড়ে। ইতোমধ্যে রাঙামাটির ২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং তিনদিন ধরে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্যা কবলিতদের জন্য ৫৩০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার না খেয়ে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের বিশেষ দল মাঠে কাজ করছে। কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। কোনো দুর্যোগের খবর পাওয়া মাত্র প্রশাসনের বিশেষ দল সেখানে উপস্থিত হবে।বা:প্র।