যেসব দেশে গেলে গ্রেফতার হতে পারেন নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট

ডেস্ক : যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে শেষমেশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাই জারি করলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক অভূতপূর্ব চাপ তৈরি করেছে। তবে প্রশ্ন হলো, কোন দেশ এই পরোয়ানা কার্যকর করবে এবং আদৌ তারা গ্রেফতার হবেন কি?

আইসিসি-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার। যদি নেতানিয়াহু বা গ্যালান্ট এই দেশগুলোর যেকোনো একটির ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন, তবে তাদের গ্রেফতার করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ১২৩টি দেশ আইসিসির সদস্য, যার মধ্যে বেশিরভাগই ইউরোপ, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় অবস্থিত।

বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশ আইসিসির সক্রিয় সমর্থক। ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো আইসিসির আইন মেনে চলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আফ্রিকান ইউনিয়নের অনেক দেশ আইসিসির সদস্য, তবে অতীতে কিছু দেশ আইসিসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে। ফলে, তাদের ভূমিকা দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে।

যদিও আইসিসির সদস্য দেশগুলোর ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে, রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন। নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের গ্রেপ্তার ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু পশ্চিমা দেশ, যারা ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তারা এই পরোয়ানা কার্যকর করার সম্ভাবনা কম।

যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয় এবং তাদের এই আদালতের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের প্রধান সমর্থক। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোমধ্যেই আইসিসির এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন এবং নেতানিয়াহুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে।

ইসরাইল আইসিসির সদস্য নয় এবং তারা এই আদালতের বৈধতাকে সরাসরি অস্বীকার করে আসছে। ইসরাইলি সরকার এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে। তারা জানিয়েছে, এই পরোয়ানা তাদের কূটনৈতিক নীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

আইসিসি নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী না থাকায় এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার ক্ষমতা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভরশীল। যদি নেতানিয়াহু বা গ্যালান্ট কোনো আইসিসি সদস্য রাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, তবে তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব। তবে অতীতে দেখা গেছে, আইসিসির অনেক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা শুধুমাত্র প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবেই রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, সুদানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বাশিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তিনি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

সম্ভাব্য গ্রেপ্তারকারী দেশ:

১. ইউরোপীয় দেশগুলো: ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন এবং নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ আইসিসির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে পারে এবং নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করার উদ্যোগ নিতে পারে।

২. আফ্রিকান দেশগুলো: দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কেনিয়ার মতো দেশ, যারা পূর্বে আইসিসিকে সমর্থন করেছে, তারা এই পরোয়ানা কার্যকর করতে পারে। তবে আফ্রিকার কিছু দেশ অতীতে আইসিসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে।

৩. লাতিন আমেরিকা: ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মতো দেশ, যারা মানবাধিকার ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নেয়, তারা এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারে।

নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের বিরুদ্ধে জারি করা আইসিসির এই পরোয়ানা আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি বড় পদক্ষেপ। তবে, এই পরোয়ানার কার্যকারিতা তাদের গ্রেপ্তার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে কিনা, তা অনেকটাই নির্ভর করবে রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর।ই

মন্তব্য করুন