
নিজস্ব প্রতিনিধি : রাতের আধারে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ৭৮ জন মুসলিমকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করেছে বিএসএফ। যাদের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় এবং বাকিরা বাংলাদেশী। গত শুক্রবার ভোরবেলায় তাদেরকে লঞ্চে করে এনে সেখানে ফেলে গেলে কোস্টগার্ড তাদেরকে উদ্ধার করে গতকাল রোববার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয় বলে শ্যামনগর থানার ওসি মোঃ হুমায়ূন কবির নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, মুসলমান নিধনে তৎপর ভারতের মোদী সরকার দেশটি থেকে মুসলিমদের বিতাড়িত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এর ধারাবাহিকতায় চলছে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে তার প্রশাসন। দিনের পর দিন আটকে রেখে না খাইয়ে চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। পুশ ব্যাক করা ৭৮ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এনে ফেলে যাওয়ার আগে গুজরাটে প্রায় ১০-১৫ দিন বন্ধী করে রাখা হয়। সেসময় তাদেরকে খেতে না দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে। ফলে অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে বলে জানা যায়। ফলে উদ্ধারের পর আহত সকলকে চিকিৎসার জন্য শ্যামনগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে রেখে চিকিৎসাসেবাসহ খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে।
আহত অবস্থায় উদ্ধার করা ৭৫ ব্যক্তিদের পরিচয় প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে গুজরাটে তাদের পরিবারসহ আটকের পর পুরো পরিবার থেকে আলাদা অবস্থায় ১০-১৫ দিন বন্ধী করে রাখে। বন্ধী অবস্থায় বেধড়ক মারধরের পর বাংলাদেশ সীমানায় ফেলে দিয়ে যায়। তাদের কেউই বর্তমানে তাদের পরিবারের অবস্থা জানেন না।
পুলিশ জানিয়েছে, বিএসএফ যে ৭৮ জনকে ফেলে রেখে গেছে, তাঁদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি। ৩ জন ভারতীয় নাগরিক। এদের বাড়ি গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে। বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে এদেরকেও পুশব্যাক করেছে কট্টর মোদি সরকার।
বনবিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ক্যাম্প থেকে তাঁকে জানানো হয়েছিল, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা কয়েক দিন না খেয়ে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাত ভেঙে গেছে। আরো কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় খাবার, স্যালাইন ও পানি নিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছান।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাধবপাশা গ্রামের হারুন শেখ সাংবাদিকদের জানান, ৩৭/৩৮ বছর ধরে তিনি ভারতে ভাঙারির ব্যবসা করতেন । থাকতেন আহমেদাবাদের সুরাট বস্তিতে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ আসা-যাওয়া করতেন। গত ২৬ এপ্রিল দেশটির ক্রাইম পুলিশ বস্তিতে বসবাসকারী ৫০০-৬০০ জনকে আটক করে। এ সময় তাঁদের সামনে বছরের পর বছর ধরে থেকে আসা বস্তিটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁদের একটি পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর নারী, পুরুষ ও শিশুদের আলাদা করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে। এরমধ্যে ৭৮ জনকে একটি দলে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে চোখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। তাঁদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। কোনো রকম বেঁচে থাকার মতো দেওয়া হতো একটি রুটি ও পানি। কখনো দুটি বিস্কুট। গত ৬ মে তাঁদের চোখ বেঁধে আহমেদাবাদ থেকে প্লেনে করে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বিপরীতে ভারতের সন্দেশখালীতে। সেখানে সারা দিন রাখার পর আবার চোখ বেঁধে একটি বড় লঞ্চে তুলে ৯ মে ভোর চারটার দিকে সুন্দরবনের গহিনে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে সকাল ৯টার দিকে বন বিভাগের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা স্টেশনের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তাঁরা।
এছাড়া নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের হাসান শেখ, খুলনার তেরখাদা উপজেলার মোকামপুর এলাকার শাখায়েত মোল্যাসহ অনেকেই বলেছেন, কাজের সন্ধানে গুজরাটে গিয়েছিলেন তারা। বছরের পর বছর তারা সুরাট বস্তির বাসিন্দা ছিলেন। তাঁরা আরো জানান, তাঁদের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও মা–বাবাদের সুরাট বস্তি থেকে পুলিশ কোথায় নিয়ে গেছে, সেটি তাঁরা জানেন না। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। স্বজনদের সন্ধান চান তাঁরা।
এদিকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ৭৮ জনের মধ্যে ৩ জনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা হলেন আবদুর রহমান (২০), হাসান শাহ (২৪) ও সাইফুল শেখ (১৯)। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে তাঁদের পৈতৃক বাড়ি হলেও তাঁদের জন্ম হয়েছে গুজরাটের ওই বস্তিতে। তাঁদের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
শ্যামনগরে থানার ওসি মোঃ হুমায়ূন কবির বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।ই