
অনলাইন ডেস্ক : গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি এর সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বিচারকদের দায়িত্ব শুধু বিচারকার্য সম্পাদনই নয়; একইসঙ্গে তারা মানবাধিকারের রক্ষক ও মানবাধিকার কর্মীও বটে।
শনিবার গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি এর উদ্যোগে ও ঢাকাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন কার্যালয়ের সহযোগিতায় রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কমিশন প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের ঘটনাগুলো শুধু বিচারিক প্রক্রিয়ার বিষয়ই নয়; এটি মানবাধিকার, নৈতিকতা ও জবাবদিহিতারও প্রশ্ন। তাঁদের ন্যায়বিচারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত মানবতার পক্ষে একটি অবস্থান।
তিনি আরও বলেন, কমিশন গুম প্রতিরোধে দেশের বিচার ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা জোরদারে কাজ করছে। এক্ষেত্রে গুমের বিচার নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রয়োগ, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। কমিশন এই লক্ষ্যেই বিচারকদের জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো: ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য কমিশন বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনাপূর্বক গুম-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রাসঙ্গিক আইনসমূহের সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
কমিশনের আরেক সদস্য মো. নূর খান লিটন তার বক্তব্যে গুম প্রতিরোধে বিচারকদের দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরে এ বিষয়ে বিচারকদের সাহসী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
কমিশনের সদস্য মো: সাজ্জাদ হোসেনের সঞ্চালনায় ওয়ার্কিং সেশনে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিচারকরা গুম-সংক্রান্ত মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার জবাবদিহি নিশ্চিতের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় করেন।
বিচারকদের উদ্দেশ্যে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, বিচারক কেবল আইনের ব্যাখ্যাকারী নন, তিনি সমাজের বিবেক। মানবতা ছাড়া ন্যায়বিচার কেবলই একটি প্রক্রিয়া মাত্র, কিন্তু সহমর্মিতার সাথে ন্যায়বিচারই প্রকৃত নিরাময়।
আলোচনায় উঠে আসে গুম প্রতিরোধে স্থায়ী গুম প্রতিরোধ কমিশন গঠন, বিচার বিভাগের আওতায় আলাদা তদন্ত সংস্থা গঠন, গুম সংক্রান্ত মামলাগুলোর জটিলতা নিরসনে স্থায়ী মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং কমিশন ও বিচার বিভাগের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়ন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ।
দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কাজে নিয়োজিত বিচারক ও কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় আরও তিনটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। কর্মশালাগুলোতে প্রশিক্ষণার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর, স্বচ্ছ ও মানবিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।আ:দে।