অনলাইন ডেস্ক : সংবিধানে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের দেয়া রায় বাতিলের আবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আবেদন করেছেন। আগামী ২০ অক্টোবর রোববার আবেদনের ওপর শুনানি হবেÑ মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তার আইনজীবীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সুপ্রিম কোর্ট বারের অডিটোরিয়ামে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, বিএনপির আইন-বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জানান, তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় বাতিল চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রিভিউ আবেদন করেছেন। ৮০৭ পৃষ্ঠার এ আবেদনে ১০টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ৮০৭ পৃষ্ঠার মধ্যে মূল রিভিউ আবেদনটি ৪১ পৃষ্ঠার। রায় বাতিলের পক্ষে অন্তত ১০টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তিগুলোতে বলা হয়, আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তিনি অবসরে চলে যাওয়ার ১৮ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায় প্রকাশের আগেই জাতীয় সংসদে সংবিধানের সংশোধনী এনে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। আমরা মনে করি, এটি একটি বিচার বিভাগীয় প্রতারণা। ইতোমধ্যে ওই বিষয়ে একটি ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, গণতন্ত্র এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন যমজ সন্তানের মতো। একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না। সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করাÑ যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) প্রয়োজন।
বিএনপির যুক্তি : তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে ত্রয়োদশ সংশোধনী সংশ্লিষ্ট মৌলিক মর্যাদা অর্জন করে। সুপ্রিম কোর্ট এই মৌলিক স্তম্ভ অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে না।
মির্জা ফখরুলের যুক্তি : ত্রয়োদশ সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করেনি। কারণ, কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে এই সরকারে প্রধান করার বিধান ছিল না। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন আইনত বিচার বিভাগের কার্য হয় না। যদি তাই হয় তাহলে অবসরপ্রাপ্ত কেউ কোথাও বসতে পারে না। অথচ আমরা দেখেছি এই রায় প্রদানকারী প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে বছরের পর বছর ‘জাতীয় আইন কমিশন’-এর চেয়ারম্যান করে রাখা হয়েছে।
বিএনপির আবেদন সম্পর্কে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ১৯৯১ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়। বিএনপি সরকার জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সংবিধান ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। তারপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন যথাক্রমে ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে সংক্ষিপ্ত আদেশ দেন। সংক্ষিপ্ত আদেশের ভিত্তিতে সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তৎকালীন সংসদ তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে এবং নির্বাচনকালীন তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। ফলে পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ পরিবর্তন করা হয়। যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা গণতন্ত্র ফেরাতে রিভিউ করেছি। আশা করছি, দ্রুতই আমরা তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারব।
রিভিউ পিটিশন প্রস্তুতকারী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা ও ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে যে রিভিউ পিটিশন প্রস্তুত করা হয়েছে, তা সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস।ই