খবর ডেস্ক:
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়েছে। বাঙালি জাতি দিনভর হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছে ইতিহাসের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে।
দিনটি উপলক্ষ্যে রোববার জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, শিশু সমাবেশ, খাদ্য বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচি থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে চলার পথের পাথেয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
দিনটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তারা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী পরে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
মো. সাহাবুদ্দিন ও শেখ হাসিনা ফাতেহা পাঠ করেন এবং বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে অন্য শহিদদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করে মোনাজাতে যোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ-সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি মাজার প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইতেও স্বাক্ষর করেন। এর আগে তিনি সমাধি প্রাঙ্গণে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান।
রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। সমাধিসৌধে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিশু সমাবেশে যোগ দেন তিনি। পরে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার প্রদান, অসচ্ছল, মেধাবী শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক অনুদান বিতরণ করেন। এর আগে তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে স্মারক ডাকটিকিট, একটি প্রথম দিনের কভার এবং একটি ডেটা কার্ড প্রকাশ করেন।
এদিকে ভোর সাড়ে ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৭টায় রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথই আমাদের পথ। তিনি স্বাধীনতা দিয়ে যে উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, কোনোদিন তার মৃত্যু হবে না।
এদিকে জন্মদিন উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে জমায়েত হতে থাকে। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত নারী-পুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘মুজিবের বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই’, ‘আজকের এই দিনে মুজিব তোমায় মনে পড়ে’ ‘লাল-সবুজের পতাকায় মুজিব তোমায় দেখা যায়’-এসব স্লোগানে এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
বঙ্গভবনে দোয়া ও মিলাদ : এদিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জোহরের নামাজের পর বঙ্গভবনের দরবার হলে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। এ মাহফিল ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা সাইফুল কাবির। মোনাজাতে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য, বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং বঙ্গভবনের কর্মচারীরা অংশ নেন।
আলোচনা সভা : এর আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে দুপুরে বঙ্গভবনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহউদ্দিন ইসলাম এবং প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা : ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এরপর সুপ্রিমকোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারক সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এ সময় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা : এদিন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধরা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল নির্বাচনের স্মার্ট প্যানেলের ব্যানারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন স্মার্ট প্যানেলের চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ চৌধুরী, মহাসচিব (প্রশাসন) সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া, শাহাবুদ্দিন, মো. শাহজাহান, নুরুল ইসলাম মোল্লা, কমান্ডার মোশাররফ হোসেন, মো. শাহজাহান, আবুল বাসার, জামাল খাঁ প্রমুখ।
ধর্মীয় উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা : জাতির পিতার রুহের মাগফিরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। গির্জা-প্যাগোডা-বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন প্রার্থনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি হাসপাতালে বিশেষ স্বাস্থ্য সেবাদান কর্মসূচির পাশাপাশি রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন এবং সারা দেশের মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনাথ শিশুদের মাঝে খাবার পরিবেশন : দিনটি উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া রামশীল জহরের কান্দি অনাথ আশ্রমে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারের আয়োজনে ২৫০ শিশুর মাঝে খাবার পরিবেশন করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
আ.লীগের আলোচনা সভা আজ : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ সোমবার সকাল ১১টায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে দলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।