
অনলাইন ডেস্ক : ফ্যাসিবাদ সরকারের মদদদাতা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা এখনো প্রশাসনে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের দেখতে পাচ্ছি যারা এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে মদদ দিয়েছে, তাদেরকে সাহায্য করেছে এবং বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের সাথে তারা জড়িত তাদের চেহারা আমরা দেখতে চাই না। আবারো বলছি, দয়া করে অতিদ্রুত এদেরকে অপসারিত করে যারা দেশপ্রেমিক, যারা কাজ করতে চায়, যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের নিয়ে এসে প্রশাসন চালানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এটার জন্য জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী জাফর আহমদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সচিবালয়ের ঘেরাওয়ের ঘটনাকে অশনিসংকেত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রোববার সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার এবং কিছু পোষাকধারী লোক গোলযোগ সৃষ্টি করে তারা সেখানে সমস্যা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো। ছাত্ররা সেটাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এটা কিন্তু অশনিসংকেত, এটা ভালো লক্ষন নয়। অর্থ্যাৎ যারা পরাজিত তারা এখন আবার বিভিন্নভাবে সেই চক্রান্ত করছে এ বিজয়কে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য। তাই জনগণকে আহ্বান জানাব, আপনারা সবাই সর্তক থাকবেন, এই বিষয়গুলোকে কখনো কোনো প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান যারা সমস্যায় আছেন তাদের কাছে অনুরোধ করব, যখন ফ্যাসিবাদ ছিলো তখন দাঁড়াবার কথা তো চিন্তাই করতে পারতেন না, কথা বলার সুযোগ পেতেন না। এখন সুযোগ এসেছে, সময় দিন নতুন সরকারকে। তারা এই বিষয়গুলো দেখবে। কিন্তু এভাবে সচিবালয় ঘেরাও করে, বাধ্য করে কোনো কিছু আদায় করা এই মুহর্তে করবেন না। জনগণ সেটাকে ভালো চোখে দেখবে ন।
শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব সময় ছাত্ররাই সব পরিবর্তনগুলো নিয়ে এসেছে। ’৫২ থেকে ’২৪ সাল পর্যন্ত এবং সেই পরিবর্তনের মূল ধারাটা তারা সেট করে দিয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশের মানুষ সবসময় ছাত্রদের আলাদা চোখে দেখে, সম্মান করে, ভালোবাসে, তাদের প্রতি আস্থা তাদের সবসময় থাকে। একইসঙ্গে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের স্কুল-কলেজ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, অযথা বল প্রয়োগ করে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না যাতে প্রশাসন নষ্ট হয়ে যায়। আমরা দেখলাম, কিছু স্কুল-কলেজে বাধ্য করছে শিক্ষকদের রিজাইন করে চলে যাওয়ার জন্য। এটার তো ব্যবস্থা আছেই, অভিযোগ করেন অভিযোগ প্রমাণ হলে চলে যাবে। কিন্তু তাকে কাজ করতে দিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় একটা রোডম্যাপ দেবেন, কিন্তু ফর ট্রানজিশন টু ডেমোক্রেসি এটা আমরা উনার বক্তব্যে পাইনি। রিফর্মসের কথা বলেছেন, সেই রিফর্মসগুলো কোন কোন বিষয়, সেটারও কিছু কিছু তিনি আভাস দিয়েছেন। আমি জানি, সেগুলো এই অল্পসময়ের মধ্যে সম্ভব না। তবে সেটা সম্পর্কে একটা ধারনা থাকলে আরো বেশি করে ধারণা করতে পারতাম ঘটনা আসলে ভালোর দিকে যাচ্ছে।
‘কবে নির্বাচন হবে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি সঠিক বলেছেন। অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তো রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়াটির দিকে খুব দ্রুত যাবেন এবং তিনি রাজনৈতিকগুলোর সাথে কথা বলবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদেরকে এখন অত্যন্ত ধৈর্য্য ধরে, সর্তকতার সাথে পা বাড়াতে হবে। এই সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই সুযোগ তাদেরকে দিতে হবে। আমরা যৌক্তিক সময় অবশ্যই তাদেরকে দিতে চাই।
তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু অবাধ হয়, সবাই যেন ভোট দিতে পারে এবং এই নির্বাচনের ফলে এমন একটা অবস্থা তৈরি না হয় যে আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে, তাহলে সেটা কখনই জনগণ মেনে নেবে না। সেজন্য ধৈর্য্য ধরে আমরা অপেক্ষা করছি, জনগণ অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবশ্যই একটা নির্বাচন হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, পুলিশ স্টেট যাতে কেউ না বানাতে পারে সেই অবস্থা তৈরি করবেন। অত্যন্ত ভালো কথা। আমরা এটাই চাচ্ছি সব সময়, যে আমরা পুলিশ স্টেটে পরিণত হতে চাই না, পুলিশ প্রতিমুহুর্তে আমাদেরকে বলে দেবে যে, এটা করা যাবে, এটা করা যাবে না অথবা আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আমাদের থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে সর্বনাশ করবে, আমাদের ছেলেদেরকে গুলি করবে, এটা আমরা আর দেখতে চাই না। এটা যদি উনারা করে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, জাস্টিস টু বি এনসিউর অল এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংস, এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস, আমরাও বলছি এসবের বিচার করতেই হবে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা হয়েছে সেগুলোকে অবিলম্বে তুলে ফেলতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার মামলা উঠানো হয়েছে, আরেকজন উপদেষ্টার মামলা উঠানো হয়েছে, সাজা ছিলো সেই সাজা বাতিল করা হয়েছে। আমাদের একজন মানুষও নেই, বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, সবার বিরুদ্ধে মামলা আছে। আমাদের আশা এই ১ লাখ ৪৫ হাজার মামলা অবিলম্বে তুলে দিতে হবে।
জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের সঞ্চলনায় আলোচনা সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নবাব আলী আব্বাস খান, মাওলানা রুহুল আমিন, মজিবুর রহমার, সেলিম মাস্টার, হোসেনে আরা, প্রয়াত কাজী জাফরের বড় মেয়ে কাজী জয়া, ভাতিজা কাজী মো. নাহিদ বক্তব্য রাখেন।ই