প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি : আন্দোলনকারীদের হাতে একাধিক পুলিশ আহত

অনলাইন ডেস্ক : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়ায় পুলিশের উপর হামলা চালায় উশৃংখল আন্দোলনকারীরা। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হন। তবে এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা ও লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের বেশ কয়েকজন সদস্যরা। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থামিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় তাদের একটি ছোট প্রতিনিধিদলকে স্মারকলিপি জমা দিতে বলা হলেও বেপরোয়া আচরন করে আন্দোলনকারীরা। ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছিলেন ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্ম সদস্যরা। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর ছড়াও হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হন। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এ সময় উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ সদস্যরা।

এ বিষয়ে ডিএমপি রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্ম সদস্যদের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে রওনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থামিয়ে দেওয়া হয় এবং তাদের একটি ছোট প্রতিনিধিদলকে স্মারকলিপি জমা দিতে বলি। এ সময় তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে এবং পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। ঘটনার সময় বেপরোয়া আচরন করে আন্দোলনকারীরা।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে সামনের দিকে অগ্রসর হবার চেষ্টা করে। নিকটবর্তী স্থানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করলে তারা উল্টো পুলিশের উপর চড়াও হয়ে উদ্ধত ও মারমুখী আচরণ আরম্ভ করে। এ সময় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নারীদের নখের আঁচড়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের সাথে ধ্বস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের উপর অতর্কিত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এসময় তাদের হামলায় রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন গুরুতর আহত হন। এছাড়া হামলাকারীদের আঘাতে রমনা ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদ আলম, দুই নারী পুলিশ সদস্য এবং ৩জন পুরুষ কনস্টেবল আহত হন। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের মাধ্যমে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উক্ত ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পদযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বলেন, সারা দেশে অব্যাহতভাবে খুন-ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। যা ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যর্থ হয়েছেন। তাকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। এসব নিপীড়নের বিচার করতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাসহ সব ধর্ষণকা-ের বিচার, অংশীজনদের অংশগ্রহণে ধর্ষণ ও নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহের যৌক্তিক সংস্কার, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিপীড়নবিরোধী সেল আইন করে কার্যকর করার দাবিও জানান তারা। পদযাত্রায় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সীমা আক্তার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া শাইনা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন।ই

মন্তব্য করুন