
অনলাই ডেস্ক : ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে সরাসরি টেলিফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ২০২২ সালের শুরুর পর এটাই পুতিন এবং কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরাসরি প্রথম কথোপকথন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। উল্লেখ্য, এবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচিত হলে একদিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। কিন্তু তিনি শপথ নিয়েছেন ২০শে জানুয়ারি। এখনো যুদ্ধ যে অবস্থায় ছিল, তেমনই আছে। ফলে তিনি কীভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধ হলো রক্তপাতের। এটা নিয়ে তার টিম খুব চমৎকার আলোচনা করেছে। শুক্রবার এয়ারফোর্স ওয়ানে এক সাক্ষাৎকারে নিউ ইয়র্ক পোস্টকে তিনি বলেন, পুতিন দেখতে চান মানুষের মৃত্যু বন্ধ হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বার্তা সংস্থা তাস’কে বলেছেন, বিভিন্ন রকম যোগাযোগ হচ্ছে। আলাদা আলাদা চ্যানেলের মাধ্যমে এসব যোগাযোগ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে তেমন কিছু জানি না। ফলে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতেও পারবো না। আবার প্রত্যাখ্যানও করতে পারবো না। উল্লেখ্য, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হয় ২০১৪ সালে। ওই সময় রাশিয়ানপন্থি প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করে ইউক্রেনের মেইডান রেভ্যুলুশন। রাশিয়া দখল করে ক্রাইমিয়া। অন্যদিকে রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা লড়াই করছিল ইউক্রেনের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে হাজার হাজার সেনা পাঠান পুতিন। এর নাম দেন ‘স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন’। বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ানভাষীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য এই অভিযান। ন্যাটোর সদস্য হতে চায় ইউক্রেন। রাশিয়ার চোখে একে দেখা হয় এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবে। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমাদের মদতপুষ্ট ইউক্রেন বলে, রাশিয়ার এই আগ্রাসন হলো সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় একটি ভূখণ্ডকে গ্রাস করা। একই সঙ্গে তারা রাশিয়ান বাহিনীকে পরাজিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যের সমান ইউক্রেনের একটি ভূখণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্কো। ২০২২ সালের আগ্রাসনের শুরু থেকে ক্রমশ তারা দ্রুতগতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
১৯৮৭ সালে ‘ট্রাম্প: দ্য আর্ট অব দ্য ডিল’ বই লেখেন ট্রাম্প। তিনি বার বার বলেছেন, এই যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। এ নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যদিও কবে, কোথায় হবে সেই সাক্ষাৎ সে সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলা হয়নি। তবে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত হতে পারে রাশিয়ার পছন্দের ভেন্যু। এমন অবস্থায় ১৪ই জুন পুতিন যুদ্ধ বন্ধের জন্য কিছু শর্ত দেন। বলেন, ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে ইউক্রেনকে। ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এসব অঞ্চল কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়া। নভেম্বরে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে শান্তি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে চান পুতিন। তবে বড় কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেয়ার বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে রাশিয়া। ট্রাম্প টিমের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনাকে ঘিরে বার বার সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ক্রেমলিন। রাশিয়ার পার্লামেন্ট দুমা’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান লিওনিদ স্লাটস্কি বৃহস্পতিবার বলেছেন, এমন আলোচনা অগ্রবর্তী অবস্থায় রয়েছে। ফেব্রুয়ারি বা মার্চে হতে পারে আলোচনা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ কথা বলেন পুতিন। হাজার হাজার সেনাসদস্যকে ইউক্রেনে অভিযানে পাঠিয়ে এই সংলাপ করেন পুতিন। প্রায় এক ঘণ্টা সে সময় তারা কথা বলেন। ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড তার লেখা ২০২৪ সালের বই ‘ওয়ার’-এ বলেছেন, ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার পর পুতিনের সঙ্গে কমপক্ষে সাতবার সরাসরি কথা বলেছেন ট্রাম্প। এ বিষযে ট্রাম্প বলেছেন, যদি বলে থাকি তাহলে তো সেটা স্মার্ট কাজ। তবে ক্রেমলিন অস্বীকার করেছে বব উডওয়ার্ডের তথ্য। যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আগামী সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে ট্রাম্পের। নিউ ইয়র্ক পোস্টকে ট্রাম্প বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে তার সব সময় সুসম্পর্ক আছে। যুদ্ধ বন্ধে তার দৃঢ় পরিকল্পনা আছে। কিন্তু তিনি বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।সূ:মা