পাহাড় অশান্ত করার ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ইউপিডিএফ’র

খাগড়াছড়ির বর্মাছড়িতে নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনে বাধা দেওয়ার দৃশ্য।

অনলাইন ডেস্ক : আবারও পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করছে বিচ্ছিন্নতাবাদি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ। তাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে। পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকা দখলে নিয়ে সেখানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। বাড়িয়ে দিয়েছে চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘটনা। তারা নানা অজুহাতে পাহাড়ে শান্তি, শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের সাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তাদের উদ্দেশ্য হলো-জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করা। প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকাদায় ফেলে দেশে-বিদেশে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি করা। তাদের এই অপকর্মে যথারীতি মদদ দিচ্ছে আধিপত্যবাদি ভারত ও তাদের এদেশীয় এজেন্টরা। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে- সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনে বাধা দেয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এসব সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করা না গেলে দ্রুতই পরিস্থিতির অবনতি হবে, পাহাড়ে ফের অশান্তির দাবানল জ্বলে উঠবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদি সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এই দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা শুরু হয়। তার অংশ হিসাবে পাহাড়ে নৈরাজ্য শুরু করে বিচ্ছিন্নতাবাদি ইউপিডিএফ’র একটি অংশ। বিশেষ করে তাদের সশস্ত্র গ্রুপটি সেখানে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠে। নানা অজুহাতে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তারা ১ কিশোরীকে কথিত ধর্ষণের অভিযোগ তুলে রাস্তায় নামে। ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র গ্রুপের মদদপুষ্ট ‘জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে খাগড়াছড়িতে লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়ে ব্যাপক তান্ডব চালায়। তাদের নির্বিচারে গুলিতে খাগড়াছড়ির গুইমারায় ৩ পাহাড়ি যুবক নিহত হয়। আহত হন পাহাড়ি-বাঙ্গালীসহ অসংখ্য মানুষ।

খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারায় বাড়ি-ঘর দোকানপাটে আগুন দেওয়া হয়। তারা গায়ে পড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে সংঘাতে জড়াতে চায়। তবে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সাথে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাহাড়ে ওই নৈরাজ্যের জন্য ভারতকে সরাসরি দায়ি করেন। যদিও ভারতে পররাষ্ট্র দপ্তর বিষয়টি অস্বীকার করে।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সরকার ও সেনাবাহিনীর তড়িৎ হস্তক্ষেপে ওই সময় পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসলেও ওই বিচ্ছন্নতাবাদি গোষ্টী নতুন করে চক্রান্ত শুরু করেছে। ওই ঘটনায় জড়িত অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হতেই তারা তাদের গোপন ডেরা ছেড়ে পাহাড়ের জনবসতিতে আত্মগোপন করে। তাদের ধরতে গেলেই তারা স্থানীয়দের উসকে দিয়ে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। স্থানীয়রা বলছেন, সন্ত্রাসীরা জোর করেই লোকজন রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছে। তা না হলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের নির্দেশ পালন না করার ‘অপরাধের শাস্তি’ হিসাবে কারো হাতও কেটে দেওয়া হচ্ছে। নিরীহ এসব পাহাড়ী জনগণ বাধ্য হয়ে সন্ত্রাসীদের জন্য ঢাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে অভিযান চালিয়ে নিরাপত্তাবাহিনী অস্ত্রসহ তিন সন্ত্রাসীকে আটক করে। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পথেই বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু রাস্তায় অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের পথ অবরোধ করে। তারা নিরাপত্তাবাহিনীর অস্ত্র ধরে টানাটানি এবং তাদের ওপর ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন ওই তিনজনকে সেখানে রেখে আসতে হয়। এভাবে সন্ত্রাসীরা পাহাড়ি লোকজনকে মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের আড়াল করতে সক্ষম হচ্ছে। আর এই সুযোগে অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলে নতুন করে সংঘাত-সহিংসতার নীল নকশা প্রণয়ন করছে।

জানা গেছে, সামনে নির্বাচন, তাই পাহাড়কে অশান্ত করতে নানা চক্রান্ত করছে সন্ত্রাসীরা। তারা সীমান্ত পথে ভারত থেকে অস্ত্র গোলা-বারুদ আনছে। আর এসব অস্ত্রভান্ডার এবং নিজেদের নিরাপদ রাখতে তারা স্থানীয়দের আশ্রয়ে অবস্থান করছে। খাগড়াছড়ির লক্ষিছড়ি উপজেলার বর্মাছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেসব এলাকায় অভিযান ও তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। তার অংশ হিসাবে বর্মাছড়িতে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করতে গেলে সন্ত্রাসীরা বাধা দেয়। এক্ষেত্রেও তারা সাধারণ লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে তাদের বিক্ষুদ্ধ করে তোলে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়। আর এ জন্য তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয়।

সন্ত্রাসী ও তাদের মদদপুষ্ট কিছু অনলাইন মিডিয়া মিথ্যাচারে মেতে ওঠে। তারা প্রচার করে সেনাবাহিনী বর্মাছড়িতে বিহার দখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করছে। গত শুক্রবার স্থানীয়দের উসকানি দিয়ে মাঠে নামানো হয়। তারা বর্মাছড়ি বাজার মাঠে সমাবেশ করে। সেখানে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতময় করার চেষ্টা করে। তাদের সাথে ছিলো ইউপিডিএফর বেশ কয়েকজন নেতা। তবে কর্তব্যরত চৌকস সেনা কর্মকর্তারা তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। আর এই ঘটনাকে পুঁিজ করে লাগাতার অপপ্রচার শুরু হয়।

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনী আর্য কল্যাণ বনবিহারের জমি দখলে নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করছে। বাস্তবে সেখানে কোন ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে না। অভিযানের সুধিবার জন্য সেখানে অস্থায়ীভাবে একটি ক্যাম্প করা হচ্ছে। আর ওই এলাকা আর্য কল্যাণ বিহারের অনেক দূরে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপপ্রচার করছে, ক্যাম্প স্থাপন পার্বত্য চুক্তির লঙ্ঘন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই ধরনের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে চুক্তি কোন বাধা নেই। দেশের ভূখন্ড রক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী যে কোন স্থানে যেতে পারে, অস্থায়ীভাবে অবস্থান করতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অপরাধ দমনে সিভিল প্রশাসনের সহযোগিতায় সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন দেশেরই অংশ, ফলে সেখানে সেনাবাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবকিছুই করতে পারে।

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদি শাসনামলে কথিত পার্বত্য চুক্তির অজুহাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ২৪১টি নিরাপত্তা ক্যাম্প তুলে নেওয়া হয়। আবার ওপারে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু করা হয়। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অস্ত্রসহ এই পাড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে পাহাড়ে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের বেপরোয়া তান্ডব রোধে বেগ পেতে হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। দুর্গম অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে কোন সংঘাত-সহিংসতার খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পৌঁছাতে ২ থেকে ৩দিন সময় লেগে যায়। ফলে এখন অনেকে এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচনকে টার্গেট করে পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে। সীমান্ত পথেও অস্ত্র আসছে। অবৈধ অস্ত্রের আনাগোনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশি বিঘ্নিত হবে।ই

মন্তব্য করুন