পাহাড়ের জুমের পাকা ধান কাটা ব্যস্ত আদিবাসীরা

পাহাড়ের নতুন ধান কাটা শুরু। ছবি : আমাদের খবর।

মথি ত্রিপুরা (থানচি) বান্দরবান : পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসীর জনগোষ্ঠীদের পাহাড়ের ঢালে জংগল কেটে এক প্রকার চাষাবাদ করা পদ্ধতিই হল জুম চাষ। জুমের ধান পাকার সময় হওয়াই পাহাড়ের নতুন ধান কাটার শুরু হয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ীদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সহায়ক ও আদিম চাষাবাদ জুম চাষ। বর্তমানে জুম চাষ অনেকাংশে কমে এলেও পাহাড়ের উপরে বসবাসকারীরা এখনো বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীর জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির অভাবে অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল হতে হয় এখানকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের। এসময় পাহাড়ে বেশিরভাগ জুমের ধান পেকে যাওয়ায় কৃষকেরা পাকা ধান কেটে ফসল সংগ্রহ করা শুরু করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রুমা উপজেলা ০৪ নং গালেংগ্যা ইউনিয়ন ০১ নং ওয়ার্ডে, এডেন পাড়া,রামদু পাড়া,মুংগহা পাড়া,কালা পাড়া,জৈতুন পাড়া,জিগন পাড়া আরও রয়েছে থানচি উপজেলা বলিপাড়া ইউনিয়নের সাখয় কমান্ডার পাড়া নিকটবর্তী ঢালু পাহাড়ের উপর মেয়ইপ্রু মারমা জুমের এবং বিভিন্ন জায়গায় নারী-পুরুষ মিলে পাকা ধান কাটার শুরু করেছে। এসময় জুমের মালিক বলেন, ৪ হাড়ি থেকে কেউ কেউ ১৫ হাড়ি পরিমান ধান জুমে লাগায়। জুমের পাকা ধানগুলো সেপ্টেম্বর মাস থেকে ধান কাটতে শুরু করেন। স্হানীয়রা আশা করেন যে পরিমাণমত ধান পাওয়ার । একই ভাবে পাশ্ববর্তী পাড়ার রুইতন ম্রো ও নাননুং ম্রোদের জুমে ধান কাটতে শুরু করেছে।
ধান ছাড়াও জুমের তিল, ভূট্টা, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, সাদা কুমড়া, বেগুন, টক পাতা, হলুদ ও আদাসহ বিভিন্ন মিশ্রণ ফসলের চাষ করা হয়। এছাড়া জুমের বিভিন্ন রঙের গাঁদা ফুলের চাষ করা হতো। ধান কাটার শেষে গৃহিণীরা যখন বিভিন্ন কাজে জুমে যায় তখন গাঁদা ফুল মাথায় দিয়ে বাড়িতে ফিরতো, এইটা পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী। বছর শেষে পাহাড়িরা গাঁদা ফুল দিয়ে বাড়িঘর সাজিয়ে রাখতেন। পাড়ায় পূজা পার্বণ হলে গাঁদা ফুল দিয়ে দেবতাদের প্রণাম করত। জুম চাষ জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস্যের পাশাপাশি পাহাড়ের আদিবাসিদের ঐতিহ্য ধরে রাখতেও মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা টুটন দাশ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের কৃষি প্রশিক্ষণ, মাঠপর্যায়ের কৃষি পরামর্শ ও বিভিন্ন কিটনাষক সহযোগিতা দেয়ার কারনে, কৃষকেরা এখন চাষাবাদ সম্পর্কে জানে। কৃষি প্রশিক্ষণের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করলে জুম চাষ সহ ফসলের লাভবান হতে পারবে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি পরামর্শে জন্য আমরা সব সময় আছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জানান, উপজেলায় দুই হাজার একশত পনেরো হেক্টর জায়গার উপর তিন হাজার নয়শত পনেরো জন কৃষকের জুম চাষ করে থাকেন। এবছর উপাদানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে অনুমানিক ৪৫০ মেট্রোপলিটন মেট্রিক টন ধান। এবছর উপকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় পাহাড়ের আউশ জাতীয় ধান ভালো হয়েছে। আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে কৃষকেরা জুমের পাকা ধান কাটার শুরু করেছে, অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফসল সংগ্রহের কাজ চলবে।

মন্তব্য করুন