পরিষ্কার হলো না কিছুই: বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি এমনকি সরকারপক্ষ প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে অনড়

নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করবেন- এমন খবর প্রচারের পর রাজনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা অব্যাহত রয়েছে। এনিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ বিশেষ বৈঠক করেছে। প্রধান উপদেষ্টা শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিএনপি আগের মতোই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেছে।

আর জামায়াত, এনসিপিও পূর্ব দাবি অনুযায়ী অনড় রয়েছে। সরকারপক্ষও আগের অবস্থানেই রয়েছে। কবে নির্বাচন তা পরিষ্কার না করে আগের মতোই বলছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন। স্পষ্টত, ঘোলাটে পরিস্থিতির কারণে সব মহলে অস্বস্তি বিরাজ করছে।

ফলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দলগুলোর আলোচনার ফলাফল অনেকটাই শূন্যই বলা চলে। সবমিলিয়ে পরিষ্কার হলো না কিছুই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বছর পূর্তির দুই মাস আগে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির মাঠে আকস্মিক উত্তাপের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রথম দফায় বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। গতকাল আবারও দুই দফায় অবশিষ্ট প্রায় সব দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকালও দলগুলো পূর্বের মতোই দাবি জানিয়েছে। যার সূত্র ধরে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসার পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও খলিলুর রহমানকে বাদ দেওয়ার কথা বলে এসেছে।
অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবীদের দল এনসিপি সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলে এসেছে তারা। মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে জামায়াত বলে এসেছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন যেমন জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। তবে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দরকার। এই দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন প্রশ্নে আগের অবস্থানই জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথাই আবার তুলে ধরেছেন। এতে প্রধান উপদেষ্টার তথ্য সচিবের বক্তব্যে নির্বাচন ইস্যুতে দুটি পক্ষ স্পষ্ট হয়েছে। একটি পক্ষ বিএনপি অন্য পক্ষে জামায়াত ও এনসিপি। বিএনপির দাবি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। অন্যদিকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জামায়াত ও এনসিপি একমত। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, সরকারসহ সব পক্ষের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। সময়মতো সিদ্ধান্ত নেবেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারকে শুরু থেকে সহযোগিতা করে আসছে বিএনপি। বারবার দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসা বিএনপি করিডরসহ কিছু বিষয়ে প্রতিবাদ জানালেও সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরেনি। হঠাৎ রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ইঙ্গিত, আগামী নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও সরকার যাতে বিব্রত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। বরং দলটির নীতিনির্ধারকদের আশা, নির্বাচন নিয়ে সরকার দ্রুতই সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে ড. ইউনূস সম্মানজনক বিদায় নেবেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি, এমনকি এখন পর্যন্তও চাচ্ছি না। তাঁর কাছে আমরা নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ দাবি করছি। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র চাই এবং সাংবিধানিক অধিকার চাই। আর সেজন্যই আমরা বারবার নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছি। আর এটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বুঝতে পারছি এই সরকারকে নানাভাবে ভুল বোঝানো হচ্ছে।বা:প্র।

মন্তব্য করুন